সুন্নত ও আধুনিক বিজ্ঞান

ভূমিকাঃ

নিকষ কালো অন্ধকার, আঁধারে ঘিরে আছে চারদিক, কোথাও আলো নেই, নেই কোন দীপশিখা। অন্যায়, অবিচার, অনৈতিক, অসামাজিক কর্মকান্ড আর পাপাচারে ডুবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল গোটা দেশ, জাতি, গোত্র, সমাজ গোষ্ঠী।
গহীন অন্ধকারে ডুবেছিল মানুষ, অশান্তির সাগরে ভাসছিল জাতি। গোত্রে চলছিল মারামারি হানাহানি। হিংসা-প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছিল পুরো আরবভূমি। নিঃশেষ হয়েছিল মানবতা, বেড়েই চলছিল জালিমের বর্বরতা। কোথাও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শান্তির স্নিগ্ধ বারিধারা, এমনকি ছিটেফোঁটাও না। মানুষ হন্যে হয়ে খোঁজ করত শান্তির পায়রা। কিন্তু না….। তাকে তো কোথাও পাওয়া যায় না। তাকে খুঁজে বের করা দুস্কর। সে তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যতদিন যায় শুধু দূরেই যায়!
আর এমন যুগে শান্তি আসবেই বা কী করে? পুরুষ জাতি নারী জাতিকে অশুভ মনে করত; মনে করত ভোগের সামগ্রী। বাবা তার আপন মেয়েকে জীবিত কবর দিত। ছেলে তার মা’র সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হত, মনুষ্যত্ব ভুলে গিয়েছিল সব মানুষের দল।
ইতিহাসের ভাষায় যাকে জাহেলি সমাজ বলা হয়। সেই অন্ধকার জাহেলি সমাজে এমন এক মহামানব আবির্ভূত হলেন, যিনি আঁধারে ঘেরা বর্বর সমাজটাকে সোনালি সমাজে পরিণত করলেন। তিনি কে? কী তাঁর পরিচয়? যিনি অন্ধকার সমাজে আলোর মশাল নিয়ে এলেন, পথহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিলেন, আঁধারের গায়ে আলোর বন্যা বইয়ে দিলেন, অসভ্য সমাজে মানবতা-সভ্যতা ফিরিয়ে আনলেন? বঞ্চিত মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিলেন। কে এই মহামানব?
হ্যাঁ বন্ধুরা…………
তিনি আর কেউ নন! তিনি হলেন সেই মহামানব, যিনি তোমার আমার সবার ভালোবাসার মানুষ, যার সাথে কোন তুলনাই হয় না, যাকে রহমত স্বরূপ আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-তাঁরা, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, বন-বনানী, গাছ-পালা, তরু-লতা এই দু’নয়নে যা কিছু দেখি সবকিছুর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি সর্ব স্রেষ্ঠ মানব, সর্ব স্রেষ্ঠ রসূল, স্রষ্টার সর্বোচ্চ প্রিয় বান্দা হযরত মুহাম্মদ সা. যাঁকে ভালোবাসলে বা সন্তুষ্ট করলে আল্লাহকে ভালোবাসা বা সন্তুষ্ট করা হয়। যাকে অসন্তুষ্ট বা কষ্ট দিলে আল্লাহকে কষ্ট দেয়া হয়। যার সুপারিশ ছাড়া কোন উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, তাই তাঁর ভালোবাসা, সন্তুষ্টি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একমাত্র সাধনা হওয়া উচিত। তিনি আরবের মরু প্রান্তরে, কোরাইশ বংশে মা আমিনার কোল হয়ে এরই ধুলিরধরায় ৫৭০ঈসায়ী সনের ২০এপ্রিল আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই তো প্রতিধ্বতি হয়েছে কবির কবিতায়………
তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মরু পূর্ণিমারই সেথা চাঁদ দোলে
যেন উষার কোলে রাঙ্গা রবি দোলে…….

রাসূলে পাকের (সা.) বরকতময় সুন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানঃ

হুজুরে পাক (সা.) সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূলরূপে শুধু অধিষ্ঠিত নন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক আদর্শ নিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে “নিশ্চয় রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু ধর্মানুসারী লেখক-গবেষক বসবাস করেছেন এবং করছেন। কোনো লেখকই মানব সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে হযরত মুহাম্মদের (সা.) উপর সামগ্রিক সম্মানের আসন দিতে পারেন নি। বিখ্যাত বৃটিশ মনীষী জর্জ বার্নার্ড শ’ অতি সংক্ষিপ্ত কথায় হুজুরে পাকের (সা.) শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে লিখেছেন, “যদি গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়, আদর্শ ও মতবাদসম্পন্ন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একনায়কের শাসনাধীনে আনা হতো, তবে একমাত্র মুহাম্মদই সর্বাপেক্ষা সুযোগ্য নেতারূপে তাদেরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারতেন।” এ ধরনের অনেক অমুসলিম বিজ্ঞানী, মনীষী ও লেখক মহানবীকে (সা.) অন্যের উপর স্থান দিয়ে সুন্দর পরিমার্জিত বাক্য দ্বারা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
মুহাম্মদ (সা.) রাসূলের গুরু দায়িত্ব ছাড়াও তিনি মানুষ হিসেবে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে গেছেন, এমন নজীর মানব সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। আর এমন কেউ ভবিষ্যতে আসবেন এরকম কল্পনা অসম্ভব। কারণ তিনি ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রণকৌশল বিষয়ক, এক কথায় মানব জীবনের যত দিক থাকতে পারে সবক্ষেত্রেই এমন এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন, যে নিপুণতায় কোন খুঁত ধরতে পারেনি কেউ আজ পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তিনি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে ব্যবহার দেখিয়ে গেছেন, আধুনিক চিকিৎসাবিদরাও তা দেখে বিস্মিত।
একবার কোন এক রাষ্ট্রপ্রধান মহানবী (সা.)-কে উপঢৌকন হিসেবে একজন চিকিৎসক পাঠিয়েছিলেন মদীনায়। চিকিৎসক মদীনায় অনেক দিন থাকলেন। কিন্তু কোনো রোগীর দেখা পেলেন না। অবশেষে তিনি হুজুর (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, “আমি চলে যেতে চাই। কারণ মদীনায় আমি এসেছি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনের জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন রোগীর দেখাই পাইনি।” রাসূলে আকরাম (সা.) অতি সিংক্ষেপে একটি মূল্যবান কথা বললেন, “আমরা পেটে ক্ষুধা লাগলে খাই এবং পেট পূর্ণ হওয়ার আগে খাওয়া বন্ধ করি। ফলে আমাদের স্বাভাবিক কোন রোগ হয় না।” মহানবীর (সা.) একথার মধ্যে বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে। তিনি তার সংক্ষিপ্ত কথাতে অনেক কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। সত্যি তিনি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে পন্থা অবলম্বন করতেন এবং সাহাবীগণকে যে শিক্ষা দিতেন তা থেকে আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর মাহাত্ম্য খুঁজে বের করছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আমি আপনাকে পৃথিবীতে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” রহমত মানে আল্লাহর করুণা। যে করুণায় কেউ সিক্ত হলে তার কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। আর আল্লাহ বলেছেন রাসূল (সা.) গোটা পৃথিবীর রহমত অর্থাৎ শুধু মানুষ নয়, তাঁর আগমনে পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গেরও সমস্যার সমাধান হয়েছে। প্রিয় নবী (সা.) নিজেই এরশাদ করেন, “আমি প্রেরিত হয়েছি সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্যই।” তাই সকল সমস্যার সমাধান আর সেই চরিত্রের পূর্ণতা পেতে হলে আমাদের তাঁকেই পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতে হবে। পালন করতে হবে তার সহজ থেকে কঠিন, ছোট থেকে বড় সকল নিয়ম, বিধান ও বিষয়গুলো। তবেই আমরা পেতে পারি চিরশান্তি ও সমৃদ্ধির সহজ সরল পথ। রাসূলে মকবুল (সা.) বলেছেন, “যে যুগে আমার সুন্নতকে মানুষ অবহেলা করবে, সে যুগে যে আমার একটা সুন্নত পালন করবে সে একশত শহীদের সওয়াব পাবে।”(মেশকাত) হাবীবে খোদা (সা.) তাঁর নবুয়তী জীবনে যা করেছেন, বলেছেন অথবা কারও কাজের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন তাকে সুন্নত বলে। নবী জীবনের সাধারণ বিষয়গুলো, যেমন পেশাব-পায়খানায় কিভাবে যেতে হবে, এসবতো আমরা অবহেলা করছি। এ অবহেলিত বিষয়গুলোর প্রতিও যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাব হুজুরে পাক (সা.) স্বাস্থ্যের প্রতি কতখানি সচেতন ছিলেন।
আমরা জানি স্বাস্থ্যই সুখের মূল। সবাই আমরা স্বাস্থ্যের প্রতি সদা দৃষ্টি রাখি। স্বাস্থ্যসম্মত বিভিন্ন প্রকার বই পড়ি। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ চাই কি করলে আমাদের শরীর সর্বদা সুস্থ থাকবে। অথচ যিনি সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী মহান ও মনীষী শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক তাঁর দেয়া নিয়ম-কানুন কি আমরা একবার জেনেছি অথবা জেনে থাকলেও আমরা কি তা পালন করি? আজকের এই আলোচনায় মহানবীর (সা.) সুস্বাস্থ্যের কিছু বরকতময় অভ্যাস উল্লেখ করা হবে যা দেখে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, দেড় হাজার বছর পূর্বে মহানবী (সা.) যে পদ্ধতি ও অভ্যাসের উদাহরণ দেখিয়ে গেছেন, সে অভ্যাস বর্তমানকালের যদি কেউ নিয়মিত পালন করে তবে তার স্বাস্থ্যের জন্য আর নতুন কোন পরামর্শের দরকার হবে না।
নিম্নে হুজুর (সাঃ) এর বরকতময় অভ্যাসের কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হলো। পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপূর্ব মিলও তুলে ধরা হলো। একের পর এক তালিকা করার জন্য ঘুম হতে ওঠার পর থেকে রাতে শোয়া পর্যন্ত দৈনন্দিন সুন্নতগুলো সাজানো হয়েছে।

১. ঘুম থেকে ওঠার পর দু’হাতের তালু দিয়ে মুখমন্ডল ও দুচোখ মর্দন করা যাতে তন্দ্রাভাব দূর হয়ে যায়। (শামায়েলে তিরমিযী)
এ কাজটি শুধু বিজ্ঞানসম্মত নয়, স্বাভাবিকভাবেই আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব, এ অভ্যাস করলে ঘুম থেকে কত দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তখন আর তন্দ্রা ভাবটা থাকে না।

২. ঘুম থেকে উঠেই মিসওয়াক করা। (আবু দাউদ)
মিসওয়াক রাসূলে আকরামের (সা.) জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে মিসওয়াকরত অবস্থায়। হুজুর (সা.) মেসওয়াক সম্পর্কে অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। আধুনিক চিকিৎসাবিদগণ এ সুন্নত থেকে বেশ কিছু তথ্য বের করেছেন। দাঁতের ভয়ংকর কয়েকটি রোগ হয়ে থাকে। যেমন : জিঞ্জিভাইটিস (Gingivitis), এ রোগ হলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে থাকে এবং পচন ধরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। কেরিস টিথ- এ রোগ হলে দাঁতের ক্ষয় শুরু হয়। পাইয়োরিয়া (Pyorrhoea)-এতে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত ঝরে। মিসওয়াক এ রোগগুলো দূর করতে সক্ষম। গাছের ডাল দ্বারা মেসওয়াক করা স্নুত। ব্রাশ দ্বারা সুন্নত নয়। দেখা গেছে, পায়োরিয়া হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়। তখন ডাক্তারগণ পরামর্শ দেন মাড়িতে শক্ত কিছু দিয়ে হালকা হালকা করে চাপ দেয়ার জন্য। মিসওয়াক এ ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করে যা ব্রাশে হয় না। তাছাড়া মিসওয়াকের চাপটা একটু শক্ত হওয়ায় দাঁত পরিষ্কার হয় বেশী।

৩. দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালভাবে ধোয়ার পর পানির পাত্রে হাত দেওয়া। (তিরমিযী)
এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী বিষয়। ঘুমে থাকাবস্থায় অচেতনভাবে শরীরের গুপ্তাঙ্গে স্বাভাবতই হাত যায়। ফলে সেখান থেকে নানা প্রকার রোগ জীবাণু হাতে লাগে। তাই সে হাত না ধুয়ে কিছু খেলে মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাছাড়া হাতে লেগে থাকা জীবাণু থেকে বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক রোগও হতে পারে। যেমন, গুহ্য দ্বারে হাত লাগলে এ থেকে বিভিন্ন রকম কৃমি তো আছেই, এছাড়াও পুরুষের গনোরিয়া থেকে অন্যজন সংক্রামিত হতে পারে। মেয়েদের ট্রাইকোমনাস (Trichomonus) থাকলে সংক্রামিত হতে পারে।

৪. পায়খানায় জুতা পায়ে মাথা আবৃত করে যাওয়া। (ইবনে সা’দ, যাদলু মা’দ)
পায়খানায় বহুবিধ রোগ জীবাণু থাকে, বিশেষ করে বক্রকৃমির ডিম (Hook Worm) যা খালি চোখে দেখার কোন উপায় নেই, খালি পা থাকলে এগুলো সহজেই ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায়। ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। রক্ত স্বল্পতা, অনিয়মিত পায়খানা হয়। শরীরে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। জুতা পায়ে থাকলে সে আশংকা আর থাকে না।
মাথার চুল সংবেদনশীল। এগুলো যেমন অতি সহজে জীবাণু ধারণ করতে পারে তেমনি জীবাণু ছড়াতেও সক্রিয়। তাই অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তারগণকে দেখা যায়, তারা মুখমন্ডল ছাড়া মাথাও টুপি দিয়ে ঢেকে ফেলেন যাতে করে কোন রোগ জীবাণু ছড়াতে না পারে। পায়খানায় অসংখ্য রোগ জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। মাথা আবৃত থাকলে চুল সে জীবাণু ধারণ থেকে রক্ষা পায়।

৫. পেশাব পায়খানায় ছিটাফোটা থেকে সতর্ক থাকা। (বোখারী, তিরমিযী)
লক্ষণীয় বিষয়গুলো, শরীরে যে সমস্ত রোগ জীবাণু বের হয়, এর ৯০ শতাংশ প্রস্রাবের সাথে আর ১০ ভাগ পায়খানার সাথে বের হয়। প্রস্রাবের ছিঁটাফোটা থেকে সতর্ক থাকা শুধু সুন্নতের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্য এদিকে লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরী। হরেক রকম রোগ শরীরে প্রবেশ করে। যেগুলো শরীরে আশ্রয় নিতে পারে না এর ৯০ ভাগ প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তাই এর ছিটাফোঁটা যদি কাপড়ে অথবা শরীরে লেগে থাকে তাহলে রোগটা আবার শরীরে প্রবেশ করতে পারে অথবা অন্য জায়গায় ছড়াতেও পারে।

৬. পায়খানায় ঢিলা ও পানি উভয়টাই ব্যবহার করা। (তিরমিযী)
হুজুরে পাক (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি অধিক দৃষ্টি রাখতেন। শরীরের কোথাও যেন কোন রোগ জীবাণু লেগে না থাকে এজন্যে সাহাবীদের নসীহত করতেন। পূর্বেই বলা হয়েছে, শরীরের নানা প্রকার জীবাণুর ১০ শতাংশ মলত্যাগের সাথে বের হয় মলত্যাগ শেষ হলে গুহ্যদ্বার পানি দিয়ে ধোয়ার পূর্বে ৩বার ঢিলা দিয়ে ভালভাবে মুচলে (৩বার ঢিলা ব্যবহার করা মুস্তাহাব) আর কোন নাপাক লেগে থাকার আশংকা থাকে না। এরপর পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দরভাবে পরিষ্কার হওয়া যায় এবং কোন জীবাণু লেগে থাকে না। হুজুর পাক (সা.) মাটিতে হাত ঘষে ধুতেন। এরও অনেক যুক্তিসংগত কারণ আছে। বক্র কৃমির ডিম খুব ছোট হয়, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। হাতের চিকন রেখাগুলোতে এ ডিমগুলো বসে থাকে। হাত যতই কচলিয়ে ধোয়া হোক না কেন এগুলি দূর হয় না। কিন্তু মাটিতে ভালভাবে হাত ঘষে ধুলে ঐগুলো আর থাকতে পারে না।

৭. অযু করা
এটা শুধু সুন্নত নয়, নামায ও কোরআন শরীফ ধরার জন্য অযু করা ফরয। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ পাক না হয়ে তোমরা কোরআন ধরো না, নামায পড়ার জন্য অযু করা শর্ত। শরীরের যে অঙ্গগুলো কাপড়ের বাইরে থাকে, যেমন হাত, মুখমন্ডল, পা, টাখনু পর্যন্ত। অযুতে এসব যায়গা ধুতে হয়। ফলে এগুলো রোগজীবাণুমুক্ত হয়। এছাড়া ধোয়ার সময় এ সকল স্থানের স্নায়ু (Nerve) ও উপশিরা (Capillary) গুলো ঠান্ডা হয় যাতে রক্তের স্পন্দন সহজ হয়। গর্দান মাসেহের দ্বারা মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও স্থির থাকে। এমনিভাবে দৈনিক পাঁচবার অযু করলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে জীবাণু থাকতে পারে না।

৮. দাড়ি রাখা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ
দাড়িতে পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। দাড়ি না রাখলে মুখের ত্বকে দাগ পড়ে যায়। বার বার সেভ করার ফলে ত্বকের স্পর্শকাতরতা কমে যায়। দৃষ্টিশক্তি লোপ পেতে থাকে।

৯. নাভির নীচের, বগলের চুল কাটা। (মুসলিম)
বগলের নীচের ও গুপ্তাঙ্গের চুল সব সময় ঢাকা থাকে বিধায় এগুলোতে ময়লা জমে। ফলে নানা ধরনের জীবাণুর জন্ম হয়। স্বাভাবতই এগুলো অনেক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “চল্লিশ দিনের বেশী এগুলো না কাটলে গোনাহ হবে।”

১০. চুল ধোয়া, তৈল লাগানো, আচড়ানো সুন্নাত
চুল ধুলে ময়লা দূর হয়। আচড়ালেও ময়লা পরিষ্কার হয়। চুলে তেল দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে। গোড়া শক্ত হয়। চুলের শিকড় (Root) গভীরে থাকে। চুল কাল হয়।

১১. নখ কাটা
সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নখ কাটা অত্যন্ত জরুরী। নখ না কেটে খাবার খেলে সেখানে জমে থাকা ময়লা পেটে গেলে খাবার হজমে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃমির জন্ম হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূঁচ কৃমি (Pinworm) ও বক্র কৃমি (Hookworm), হয়ে থাকে। সূঁচ কৃমি হলে চুলকানির সৃষ্টি হয়। গুহ্যদ্বারে একজিমা দেখা দেয়। রাতে ঘন ঘন পেশাব হয়। ভেজাইনেটিস (Veginetis) রোগের প্রাদুর্ভাব হয়।

১২. মাথা আবৃত করে খানা খাওয়া
পূর্বেই বলা হয়েছে মাথার চুল সংবেদনশীল। এগুলো যেমন জীবাণু ধারণ করতে পারে, তেমনি ছড়াতেও পারে দ্রুত। তাই খাবারে যাতে জীবাণু ছড়াতে না পারে সেজন্য মাথা ঢাকার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে।

১৩. খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে খাওয়া। (তিরমিযী)

এ সুন্নত থেকে চিকিৎসাবিদগণ সুন্দর তথ্য বের করেছেন। খাওয়া শেষ হলে আঙ্গুল চাটার সময় মুখের ভেতর সেলিভারী গ্ল্যান্ড (SalivaryGland) থেকে টায়ালিন (Ptyalin) নামক এক প্রকার পাচক রস বের হয়, যা খাবার পাকস্থলী থেকে শিষণ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বেই প্রায় অর্ধেক হজম হয়ে যায়।

১৪. গোসল করা
প্রথমে মাথায় ও কাঁধে পানি দেওয়া। গোসল করলে শরীরের ময়লা দূর হয়। রোগ জীবাণু থাকে না। মাথায় পানি দেয়ার ফলে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ দূর হয়।

১৫. জুতা পায়ে দেওয়া
মাটিতে বহুবিধ রোগ জীবাণু ছড়িয়ে থাকে। শরীরের মধ্যে পায়ের পাতা নীচটাই মাটির সাথে লাগে বেশী। ফলে সেখানে কোন জীবাণু লেগে হতে পারে মারাত্মাক কোন রোগ, বিশেষ করে বক্র কৃমি, যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে, এগুলোর ডিম সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে। অনেক দিন পূর্বে এক স্থানে একটু মল ছিল; পরে ধুয়ে মুছে সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু বক্র কৃমির ডিম নিঃশেষ হয়ে যায় না। এরা বহুদিন পর্যন্ত টিক থাকে। খালি পা পেলে এগুলো সহজেই গভীরে ঢুকে যায়।

১৬. খৎনা করা
মুসলমানদের একটা বিশেষ পালনীয় সুন্নত হলো খৎনা। লিঙ্গের উপরিভাগের বাড়তি চামড়া না কাটলে ভয়ানক রোগ হতে পারে। এই ত্বকের ভেতর জমে থাকা ময়লা বিষাক্ত হয়ে অনেক সময় চামড়া ফুটো হয়ে যায়। উপরে ফুটো হলে এটাকে ফাইমসিস (Phimosis) বলে। নীচে ফুটো হলে প্যারাফাইমসিস (Paraphimosis) বলে। এ রোগ হলে উপরের বাড়তি চামড়া না কাটলে চামড়ায় পচন ধরতে পারে। স্ত্রী সহবাসে মারাত্মক অসুবিধা হয়। এর ময়লার সাথে জমে থাকা বিভিন্ন রোগ জীবাণু স্ত্রীজরায়ুতে লেগে নানা রকম সংক্রামক রোগ দেখা দেয়। লিঙ্গের মাথায় মাংস জমে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিধায় ক্যান্সার হতে পারে। আমার জানা মতে অনেক হিন্দু ডাক্তার এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য খৎনা করেছেন।

১৭. মদ ও শূকরের গোশত না খাওয়া
এগুলো শুধু হুজুরের (সা.) পরিত্যাজ্য বস্তু নয়। কোরআন শরীফে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে হারাম ঘোষণা করেছেন। মদ পান করলে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। কোন ঔষধ শরীরে কাজ করে না। ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডে পানি জমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে খুব অসুবিধা হয়। কিডনীতে অসুবিধা করে।
শূকরের মাংসে এমন এক প্রকার জীবাণু থাকে যা সিদ্ধ করলেও সহজেই নষ্ট হয় না। এ জীবাণু থেকে দীর্ঘ স্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ফিতা কৃমির (Tapeworm) সৃষ্টি হয়। বড়ি বড়ি পায়খানা হয়। রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।

১৮. অযু করে ঘুমানো (যাদুল মা’দ)
সারাদিন ক্লান্তির পর রাতে শোয়ার সময় শরীর গরম ও মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে যায়। সেজন্য ভালভাবে ঘুম হয় না। ঘুমে স্বপ্ন দোষ হয়। ঘুমের প্রথমে অযু করলে উপশিরা স্নায়ু ঠাণ্ডা হয়। ঘাড় মাসেহ করায় তাৎক্ষণিক মাথা ঠাণ্ডা হয় এবং স্থির থাকে। ফলে ঘুম শান্তভাবে হয়। ঘুমে স্বপ্নদোষ খুব কম হয়।

১৯. ডান পাশে শোয়া
ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। পাকস্থলীর খাদ্য শিষণ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ হলো ডান দিকে। তাই ডান দিকে কাত হয়ে শুলে খাবার পরিপাকে সুবিধা হয়। খাবার একত্রে আর জমে থাকে না। হুজুর (সাঃ)-এর প্রতিটি কাজই ছিল সহজ ও বাস্তবধর্মী। উপরে তাঁর সামান্য কয়েকটি বরকতময় অভ্যাসের আলোচনা হলো। সবগুলোর উল্লেখ এ স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। উপরোল্লেখিত সুন্নতগুলো বাস্তব ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপূর্ব মিল তথা শারীরিক সুস্থতা বজায় রক্ষার্থে যথেষ্ট উপকারী। সাথে সাথে রয়েছে এর অনেক সওয়াব ও ফজীলত। আল্লাহ পাক আমাদেরকে রাসূলের (সা.) মতাদর্শে সঠিকভাবে চলার তৌফিক দান করুন।

(এ প্রবন্ধটি তৈরিতে বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ জনাব মোঃ জহুরুল ইসলাম (এমবিবিএস) সাহেবের সাহায্য নেয়া হয়েছে। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।)

আমাদের মেসওয়াক ও আধুনিক বিজ্ঞান :

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ কে ভালবাসতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন, আর আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। [সূরা আল ইমরান : ৩১]
অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের নিকট রাসূল সা, যে আদর্শ নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর। এবং যে সমস্ত বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো। [সূরা হাশর : ৭]
রাসূল সা. বলেন মেসওয়াক হল মুখের পবিত্রতার মাধ্যম এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির কারণ। [বুখারী] হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সা, বলেছেন যদি আমি আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশংকা না করতাম তাহলে আমি তাদেরকে ইশার নামায বিলম্বে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের পূর্বে মেসওয়াক করতে আদেশ করতাম। [বুখারী, মুসলিম]
শুরাইহ ইবনে হানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেসা করলাম, রাসূল সা. যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন সর্বপ্রথম কি করতেন? উত্তরে তিনি বলে, ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথমে তিনি মিসওয়াক করতেন [মুসলিম]
রাসূল সা. মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, এতে দাঁতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং দাঁতের সৌন্দর্য বজায় থাকে। যারা শুধুমাত্র ব্রাশ ব্যবহারে অভ্যস্ত তাদের উচিত মেসওয়াক ব্যবহার করা। বিজ্ঞান গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্রাশের ভিতর যে জীবানু জমা হয় পানি দ্বারা পরিষ্কার করার পরও জীবানু দূর হয় না। জীবানু বিষেশজ্ঞগণ দীর্ঘদিন গবেষণার পর এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে যে, কোন ব্রাশ একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা স্বাস্থের জন্য ও সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। পশ্চাত্যের বিশেষজ্ঞরা মেসওয়াকের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনায় পিলুর মেসওয়াক উত্তম বলে আখ্যায়িত করেছেন। উন্নত দেশ সমূহের শিশুরা অধিক চিনি খায়, কিন্তু নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহারের কারণে তাদের দাঁত নষ্ট হয়না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেসওয়াকের জন্য ব্যবহার করা বৃক্ষের শাখা প্রশাখা জীবানু রোধ করে। মেসওয়াক ব্যবহারের ফলে দাঁতের মাড়ির রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, দাঁতের গোড়া শক্ত হয়। দাঁত পরিষ্কার থাকে, সেই সাথে মুখের দূর্গন্ধ দূর হয়। পিলুর মেসওয়াক নরম। সহজে চিবানো যায়। চিকিৎসকদের মতে ইউরোপের ওষুধ প্রস্তুতকারকগণ পিলু বৃক্ষের প্রতি মনোযোগী। কারণ পিলুর শাখায় কোমেথর পিউটিকের অংশ থাকে যা মুখের গাঢ় লাল নিঃশেষ করে। আফ্রিকান চিকিৎসকদের মতে পিলু ব্যবহার করলে মুখে জীবানু ও ব্যকটেরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়। হামদর্দ কোম্পানী পিলুর জওহর থেকে পিলু টুথপেষ্ট তৈরি করার গৌরব লাভ করেছেন। আমেরিকায় এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেসওয়াক দাঁত ছাড়াও পেটের পিড়ার জন্য প্রতিষেধক

মেসওয়াক ও আধুনিক চিকিৎসা গবেষণা

পেটের সকল রোগ মুখ দিয়ে প্রবেশ করা জীবানুর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। একথা প্রমাণিত হওয়ার পর



মুখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় মেসওয়াকের চেয়ে উত্তম কোন ব্যবস্থা নেই। একারনে এখানে মেসওয়াক সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি কথা বর্ণনা করা হল।
১। শুয়ে শুয়ে মেসওয়াক করা যাবে না কারন এতে লিভার বেড়ে যায়।
২। মুঠো বন্ধ করে মেসওয়াক করা যাবেনা কারন এতে ফোড়া ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
৩। মেসওয়াক শেষ করে তা নিচে ফেলে রাখা যাবেনা। এতে পাগলামী রোগ দেখা দেয়।
৪। শামী গ্রন্থে রয়েছে মূত্য রোগ ব্যতীত অন্য সকল রোগ মেসওয়াক ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো হয়।
৫। নিয়মিত মেসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালেমায়ে শাহাদাত নসীব হয়।
৬। মেসওয়াক ’ছাফরা’ রোগ প্রতিরোধ করে।
৭। মেসওয়াক চুষলে অন্ধত্ব সৃষ্টি হয়।
৮। সুগন্ধি বা ফলবান লাকড়ি দিয়ে তৈরি মেসওয়াক অন্ত্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, যা দ্বারা রোগ বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্যু হতে পারে।
৯। মেসওয়াকের মাধ্যমে নির্গত প্রথম বারের লালা গিলে ফেললে কোন অসুখ হয় না। এর পর গিললে নানা রকম পেটের পীড়া দেখা দেয়।
১০। নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহার করলে বার্ধক্য দেরীতে আসে কালো চুল দেরীতে সাদা হয়।
১১। মেসওয়াকের মাধ্যমে দৃষ্টি শক্তি প্রখর হয়।
১২। নিয়মিত মেসওয়াকের ফলে মুখের ও বগলের দূর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১৩। মেসওয়াক ব্যবহার দাঁতের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়। দাঁতের মাড়ি মজবুত হয় আর দাঁেতর ব্যথা দূর হয়।
১৪। মেসওয়াকে মাধ্যমে আহার্য তাড়াতাড়ি হজম হয়।
১৫। মেসওয়াক কফ, কাশি থেকে নিরাপত্তা দেয়।
১৬। মেসওয়াকের অভ্যাস গড়ে তুললে মুখের ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা হয়।
১৭। মেসওয়াকের মাধ্যমে মাথার শিরা উপশিরা শান্ত থাকে।
১৮। মেসওয়াকের দ্বারা বহু অজ্ঞাত রোগের প্রতিকার পাওয়া যায়। এর রসায়নিক প্রক্রিয়ায় অনেক গুরুতর রোগের অবসান ঘটে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের মতে দাঁতের ক্ষতি মেসওয়াক না করার কারনে হয়ে থাকে। মেসওয়াকের সুন্নত ত্যাগ করার কারনে সাধারণত মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। কারন দাঁতের ময়লা খাদ্যের সাথে আমাদের লালার সাথে মিশে পেটে প্রবেশ করে। এর ফলে খাদ্য দ্রব্যের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হওয়া বাস্তব সত্য। নানা ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে পশ্চাত্যের উন্নত সমাজ হয়তো এই সুন্নতের অনুসরণ করবে। মানুষ সুন্নত থেকে যতই দূরে সরে গেছে ততোই সমাজে রোগ ব্যধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মিসওয়াকের গুরুত্ব,ফযীলত, মাসায়িল, উপকারিতা ও হুকুম

প্রকৃতি কখনো মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ নয়, বরং উহা সব সময়ই মানব স্বভাবের উপকার করে থাকে। যেমন চমকদার একটি মহামূল্যবান মুক্তার পরিবর্তে সামান্য একটুকরা কাঁচের খণ্ড গ্রহণ করা যেমনি বুদ্ধিহীনতার কাজ ঠিক তেমনি চমকদার মহামূল্যবান মেসওয়াকের ন্যায় সুন্দর আমলটির পরিবর্তন করাও বুদ্ধিহীনতা ও মূর্খতার কাজ।

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর অনেক হাদিসের মাধ্যমে বাসত্দব প্রমাণ পাওয়া যায়। আরএই মিসওয়াক নবী করীম (সাঃ) এর অন্যতম একটি সুন্নাত। যেমনঃ মিসওয়াক করলে যেমন মুখ পবিত্র হও ও দুর্গন্ধমুক্ত হয় তেমনি এতে আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। (নাসায়ী, বুখারী)
অর্থাৎ এমনটি কখনো হয়নি যে, জিব্রাইল (আঃ) আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের পরামর্শ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াক করতে করতে আমার অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি। (মিশকাত, মুসনাদে ইমাম আহমদ)

অর্থাৎ আমার উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক হবে মনে না করলে আমি প্রত্যেক অযূর সময়ই মিসওয়াক করার জন্য আদেশ করতাম। (বুখারী শরীফ)
হযরত আয়শা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন মিসওয়াক করে যে সালাত আদায় করা হয় সালাত মিসওয়াক বিহীন সালাতের সত্তর গুণ বেশি ফযিলত রয়েছে। (বায়হাকী, মিশকাত)

মিসওয়াকের উপকারিতা

এছাড়াও মিসওয়াকের বিভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরা হলঃ

* মিসওয়াক করলে আল্লাহ্ তায়ালার রেযামন্দী হাসিল হয়।                                                     * মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত মজবুত হয়।
* মাথার ব্যথা উপশম হয়, কাশি দূর হয়, পাকস্থলী ঠিক থাকে এবং শরীর শক্তিশালী হয়।
* দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়, স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে।
* অন্তর পবিত্র হয়, সৌন্দর্য বাড়ে।
* ফিরিশতা তার সাথে মুসাফাহা করেন, নামাযের জন্য বের হলে তাকে সম্মান করেন, নামায আদায় করে বের হলে আরশ বহনকারী ফিরিশতা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
* শয়তান অসন্তুষ্ট হয়, বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার হবে, আমলনামা ডান হাতে পাবে।
* ইবাদতে শক্তি পাবে, মৃত্যুর সময় কালিমা নসীব হবে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হবে এবং পূত-পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। (মারাকিল ফালাহ, পৃ. ৫৪)

রাত ও মিসওয়াক

রাসূল (সাঃ) রাতে শয়নকালে মিসওয়াক করা ছিল মহান অভ্যাস। আর ঘুম থেকে জেগেও মেসওয়াক করা থেকে
বিরত থাকতেন না। বর্তমান বিজ্ঞান রাসূল (সাঃ)-এর এই আমল। রিচার্স করে এ কথা বলে যে, মানুষ যা ভৰণ করে তার ময়লা কুলি করা দ্বারা পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার হয় না। আবার সাধারণত দাঁত নষ্ট হয় শয়নকালে। কারণ আমরা প্রত্যৰ করে থাকি যে, দিনের বেলা মানুষ কখনো কথা বলছে, কখনো আহার করছে আবার কখনো পান করছে। তাই দিনের বেলায় মুখের গতিশীলতার কারণে রক্ত লস, রক্ত লসিকা তার কাজ করার সুযোগ পায় না। কিন্তু রাতের বেলায় মুখ বন্ধ হয়ে যায় তখন কাজ করার সুযোগ এসে যায়। এ কারণেই রাতের বেলায় দাঁত অধিক খারাপ হয়। তাই রাসূল (সাঃ) সর্বদা অজু অবস্থায় শয়ন করতেন আর মিসওয়াক ব্যতীত কখনই অজু করতেন না। তাই একথা প্রমাণিত হয় যে, রাতের বেলায় মেসওয়াক করে ঘুমানো প্রয়োজন।

নামাজের পূর্বে মেসওয়াক

নামাজ হল মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মধ্যে অন্যতম। যা কিয়ামতের ময়দানে প্রথম হিসাব নেয়া হবে। তাই নামাজের সময় অনত্দর পরিশুদ্ধের জন্য মুখ পরিস্কার রাখা একানত্দ আবশ্যক। যদি আহারের পর মিসওয়াকবিহীন অযু করে আর এতে নামাজ আদায় করা হয় তাহলে দাঁতের ফাকে ফাকে আটকে থাকা খাবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো জিহ্বায় লেগে নামাজের একাগ্রতা বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তাছাড়া নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় নামাযি ব্যক্তির মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে তার দ্বারা অন্য নামাজিদের কষ্ট হয়। তাই নামাজের পূবে ওযু করার সময় মেসওয়াক করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নেয়া একানত্দ কর্তব্য।

হৃদপিণ্ডের ঝিল্লিতে পুজ ও মিসওয়াক

পাকিসত্দানের ডাঃ তারেক মাহমুদ বলেন, এক ব্যক্তির ঝিল্লিতে পুজ হয়েছিল কিন্তু লোকটি যতই চিকিৎসা নিচ্ছে ভাল হচ্ছে না। অবশেষে ডাক্তার অনেক পরীৰা-নিরীৰা করে দেখল তার দাঁতের মাড়িতে ৰত আছে তাতে পুজ ভর্তি আ দাঁতের মাড়ির পুজ তার হৃদপিণ্ডে গিয়ে জমা হচ্ছে। অতঃপর তাকে যখন পরামর্শ দেয়া হল মিসওয়াক ব্যবহার করার জন্য। অতঃপর অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।
# ৬১৫৯১; এছাড়াও মুখের স্বাদ বৃদ্ধি, হযম শক্তি বৃদ্ধি, চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি, মৃত্যু রোগ ব্যতীত যাবতীয় রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে। স্বর সুস্পষ্ট হইবে। মৃত্যুকালে কলেমা ‘লা-ইলাহা’ উচ্চারণ করত মৃত্যু হইবে।
# ৬১৫৯১; হযরত আলী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক দ্বারা মসত্দিষ্ক সতেজ হয়।
# ৬১৫৯১; বাণীই ইছায়ছীনা শাহ্সুফী নেছারুদ্দীন আহমদ (রহঃ) বলেন, বৎস! মেসওয়াক করিতে কখনো ভুলিওনা বা ক্রুটি করিওনা। ইন্শাআলস্নাহ উক্ত নেকীসমূহ প্রাপ্ত হইবে।
# ৬১৫৯১; অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ রিচার্স ও গবেষণা করে দেখেছেন পাকস্থলির ৮০% রোগ দনত্দ রোগের কারণে হয়ে থাকে। তাই পাকস্থলির রোগ, পেটের রোগ, মসত্দিষ্কের, মাথা ব্যাথা, ঘাড় ব্যথা মেসওয়াক দ্বারা দূর করা সম্ভব।

মেসওয়াক কি দ্বারা, কত পরিমাণ হওয়া উচিত?

মেসওয়াক দাঁতের জন্য উপযোগী/যার আঁশগুলো হয় কোমল যা দাঁতের মাঝে ফাঁকা বৃদ্ধি করে না এবং মাড়িতে ৰত সৃষ্টি করে না এমন বৃৰ দ্বারা দাঁত মাজাকে মেসওয়াক বলে। তিনটি গাছের ডাল মেসওয়াকের
(১) উপযোগী পীলু গাছ
(২) নিম গাছ
(৩) বাবলা গাছ।
তিক্ত জাতীয় গাছ দ্বারা মিসওয়া করা মুসত্দাহাব। রাসূল (সাঃ) জয়তুন গাছ দ্বারা মিসওয়াক করতেন। ফতোয়ায়ে শামী কিতাবে লিখিত আছে প্রথমবার এক বিঘত হওয়া মুসতাহাব। ব্যবহার করতে করতে ঘাট হলে খতি নেই। আর এক বিঘতের বেশি হলে মিসওয়াক করবার সময় শয়তান মেসওয়াকের উপর চড়ে বসে।

মিসওয়াকের ধরণ :

* যে সব গাছের স্বাদ তিতা সে সব গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
* যায়তূনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম।
* মিসওয়াক কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মত মোটা হওয়া উত্তম।
* মিসওয়াক প্রথমে এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উত্তম।
* মিসওয়াক নরম ও কাঁচা হওয়া উত্তম।
* মিসওয়াক কম গিরা সম্পন্ন হওয়া উচিত।
* অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের মতে উযূতে কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম। তবে কোন কোন আলিম উযূ করার পূর্বে মিসওয়াকের কথাও বলেছেন।
* ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর, নামাযের আগে, মজলিসে যাওয়ার পূর্বে এবং কুরআন ও হাদীস তিলাওয়াত করার পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
মিসওয়াক ধরার তরীকা :
* মিসওয়াক ডান হাতে ধরা মোস্তাহাব।
* ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল মিসওয়াকের নীচে আর মধ্যমা ও তর্জনী মিসওয়াকের উপরে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এর মাথার নিচ ভালভাবে ধরা। এভাবে মিসওয়াক করা হযরত ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত রয়েছে।

মিসওয়াক করার তরীকা :

* মিসওয়াক শুরু করার পূর্বে ভিজিয়ে নেয়া উত্তম।
* প্রথমে উপরের দাঁতের ডান দিক অতঃপর বাম দিক, তারপর নীচের দাঁতের ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে, তারপর দাঁতের ভিতরের দিকে অনুরূপভাবে ঘষতে হবে।
* উপরোক্ত নিয়মে তিনবার ঘষা উত্তম। প্রতিবারেই নতুন পানি দিয়ে মেসওয়াক ধুয়ে দেয়া মোস্তাহাব।
* মিসওয়াক দাঁতের অগ্রভাগে, উপর ও নীচের তালুর অগ্রভাগে এবং জিহবার উপরিভঅগেও করা উত্তম।
* মিসওয়াক দাঁতের উপর চওড়াভঅবে ঘষা নিয়ম। ইমাম গাযযালী (রহ.) উপর নীচ-ভাবে ঘষার কথাও বলেছেন। কমপক্ষে চওড়াভাবে ঘষতে হবে।
* শোয়া অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ।
* মিসওয়াক করার পর মেসওয়াক ধুয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে।
বি. দ্র. :- মিসওয়াক না থাকলে মিসওয়াকের বিকল্প হিসেবে ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। এতে মিসওয়াকের ডাল বিষয়ক সুন্নাত আদায় না হলেও মাজা ও পরিস্কার করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় হাত দিয়ে বা মোটা কাপড় দিয়ে দাঁত মেজে নিতে হবে। হাত দিয়ে মাজার তরীকা হল: ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে ডান পাশের দাঁতের উপরে অতঃপর নীচে, তারপর শাহাদাত (তর্জনী) আঙ্গুল দিয়ে বাম পাশের দাঁতের উপরে অতঃপর নীচে ঘষতে হবে।

মেসওয়াক রাখবার নিয়ম :

মেসওয়াক করে মেসওয়াকটি যত্নসহকারে সুরৰিত স্থানে রাখবে। শামী কিতাবে মর্মে জানা যায়, মেসওয়াক অযত্নে সুরৰিত স্থানে না রাখিলে পাগল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মেসওয়াক ধৌত করে রাখবে। নচেৎ শয়তান তদ্বারা মেসওয়াক করবে। অতএব, যে কোনো প্রকারে হোক মেসওয়াকের যত্ন নেয়া আমাদের একানত্দ আবশ্যক।

ব্রাশ ও তার অপকারিতা :

(পেস্ট ইহুদীদের তৈরি মুখ নাপাক স্থাপন করে) পরিবেশে বলা যায়, হযরত রাসূল (সাঃ) বলেছেন তোমরা রাত্রে নামাজ পড়। রাত্রে মেসওয়াক করতঃ নামাজ পড়িলে নামাজের মধ্যে যা কিছু দোয়া পড়বে ফেরেশতারা মুসল্লির মুখ দিয়ে তা গ্রহণ করবেন।

এ কিতাব লিখতে যেসব কিতাবের সহযোগিতা বর্ণনা করা হয়েছে (১) দুররুল মোখতার; কুদুরী (২) শরহে বেকারা, (৩) ফতোয়ায়ে আলমগীরি (৪) হাশিয়ায়ে তাহতাবী (৫) মারাকিল ফালাহ (৬) হেদায়া (৭) বাহরুব রাফেক ( সুন্নাতে রাসূল (সাঃ) ও আধুনিক বিজ্ঞান (৮) দাদা হুজুর কেবলা (রহঃ) কর্তৃক প্রকাশিত তরিকুল ইসলাম।

কয়টি সময়ে মিসওয়াক করবেঃ

রসুলের (সঃ) আদর্শের একটি হলো ‘মিসওয়াক’! এটি সুন্নত।
পাঁচটি সময়ে মিসওয়াক করা উত্তম:
(১) দাঁত যখন পান্ডবর্ণ হয়ে মুখে দুর্গন্ধ আসে।
(২) নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর।
(৩) প্রত্যেক নামাজের প্রস্তুত প্রাক্বালে।
(৪) অজুর প্রারম্ভে।
(৫) মিথ্যা কথা বা গিবত করার পর!

উলামাগন হাদীসের আলোকে মিসওয়াকের ৬০টি উপকারীতা:

মিসওয়াক সম্পর্কে উলামাগন হাদীসের আলোকে ৬০টি উপকার বর্ণনা করেছেন-
(১) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।
(২) এক রাকাত নামাজের সওয়াব ৭০ বা গুণ বর্ধিত হয়।
(৩) পাবন্দির সহিত মিসওয়াক করলে আর্তিক স্বচ্ছলতা লাভ হয।
(৪) ঐশ্বর্য্যশালী হওয়া যায়।
(৫) সহজে রিজিক লাভ হয়।
(৬) মুখ সুগন্ধময় হয়।
(৭) মাড়ি শক্ত করে।
(৮) মাথা ব্যথা দুর করে।
(৯) মাথার শিরা গুলি সংযত রাখে।
(১০) মাথা ধরা বন্ধ করে।
(১১) কফ দুর করে।
(১২) দন্ত মজবুত থাকে।
(১৩) কণ্ঠনালী ময়লা মুক্ত রাখে।
(১৪) পাকস্থলী কর্মম রাখে।
(১৫) বাকশক্তি বৃদ্ধি করে।
(১৭) স্মরণ শক্তি বর্ধিত করে।
(১৮) বুদ্ধির উৎকর্ষ সাধন করে।
(১৯) অন্তর পবিত্র রাখে।
(২০) সৎকাজে উৎসাহ জন্মায়
(২১) পারিবারিক জীবন সুখময় হবে।
(২২) চেহারা উজ্জ্বল হয়।
(২৩) ফেরেশতা গন মুসাফাহা করেন।
(২৪) মিসওয়াকের পর নামাজের উদ্দেশ্যে বাহির হলে ফেরেশতারা অভিবাদন জানান।
(২৫) মসজিদ থেকে বের হলে আরশ ধারণ ও বহন কারী ফেরেশতারা তার জন্য ইস্তেগফার করেন।
(২৬) নবীগন ইস্তেগফার করেন।
(২৭) রসুল গণ ইস্তেগফার করেন,
(২৮) শয়তান অসন্তুষ্ঠ ও লজ্জিত হয়।
(২৯) শয়তান বিতাড়িত হয়।
(৩০) মেধা শক্তিকে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখে।
(৩১) ভূক্ত দ্রব্য পরিপাক করে।
(৩২) সন্তানাদি বৃদ্ধি করে।
(৩৩) বিদ্যুৎ চমকের মত পুলসিরাত অতিক্রম করা যায়।
(৩৪) হায়াত বৃদ্ধি করে।
(৩৫) আমল নামা ডান হাতে দেওয়া হবে।
(৩৬) ইবাদতের জন্য শরীরকে শক্তিশালী করে
(৩৭) কোরআন পাঠের পথ সহজে করে
(৩৮) শরীরের বেদনা দুরকরে।
(৩৯) মেরুদন্ড শক্ত করে।
(৪০) মৃত্যু সহজে হয়।
(৪১) দ্রুত রুহ বের হয়।
(৪২) দাঁত চকমকে রাখে।
(৪৩) মুখ সুবাসিত করে।
(৪৪) চরিত্র মধুর করে।
(৪৫) জিহবা সংযত রাখে।
(৪৬) বোধ গম্যতা প্রখর হয়।
(৪৭) মৃত্যু কালে কালেমায়ে শাহাদাত নসীব হয়।
(৪৮) দৃষ্টি শক্তি সতেজ হয়।
(৪৯) সওয়াব দ্বিগুন করে।
(৫০) মাল সম্পদ বর্ধিত করে।
(৫১) উদ্দেশ্য সিদ্ধিত সহায়ক হয়।
(৫২) কবর প্রশস্ত হয়।
(৫৩) কবরে নির্ভীক থাকা যায়।
(৫৪) মিসওয়াক, যে করে না তার রতি সওয়াব মিসওয়াক কারীকে দেওয়া হয়।
(৫৫) বেহেশতের দরজা গুলি তার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
(৫৬) দোযখের দরজা তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
(৫৭) ফেরেশতারা বলেন, মিসওয়াক কারী নবীর অনুসারী
(৫৮) মিসওয়াক ক্বারী প্রত্যেহ নবী চরিত্র কুড়িয়ে গ্রহণ করতেছে।
(৫৯) দুনিয়া থেকে পবিত্র অবস্থায় বিদায় নিবে।
(৬০) তার রুহ কবজের সময় ফেরেশতা গন ঐ সুরতে আসবেন যে সুরতে নবী ও রাসূল ও অলীদের নিকট আসেন .

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে অজু

পবিত্রতা অর্জনকে অর্থাৎ বিশেষত অজুকে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তবে, বাংলা ভাষায় এর প্রতিশব্দের বানানটিতে বিভিন্নতা দেখা যায়। আরবী ‘‘দোআত‘‘ বা ‘‘দত‘‘এর স্থলে অনেকে ‘‘য‘‘ব্যবহার করে শব্দটিকে লিখেন ‘‘অযু‘‘;আবার ‘‘জ‘‘ ব্যবহার করে একে লিখে থাকেন ‘‘অজু“। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত আরবী-বাংলা অভিধানের প্রতিবর্ণায়নের তালিকা অনুযায়ী দুই প্রকার বানান হয়: ‘‘ওদু‘‘ অথবা ‘‘ওযু‘‘।

ইসলাম ধর্মে পবিত্রতা :

ইসলাম পবিত্রতার যে ধারনা দিয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বে যে সংহতি সহকারে তা পালিত হয় তার নযির গোটা দুনিয়াতে বিরল।এ ক্ষেত্রে বুনিয়াদী বিষয় হলো: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা ভালবাসেন।আর,আল্লাহ তায়ালা দ্বীনকে অর্থাৎ পবিত্রতা অর্জনকে সহজ করেছেন।ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের অনুষঙ্গ ৩টি: ইস্তিনজা (পেশাব/পায়খানায় করনীয়),অজু এবং গোসল।পবিত্রতা অর্জনের এ বিষয় গুলো সম্পর্কে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। শিয়া–সুন্নি যে কোন মুসলিমই হোক না কেন, অজু ছাড়া কেউই নামায পড়ে না। এছাড়া, পবিত্রতা অর্জনের কাজগুলোর নিয়ম কানুন সম্পর্কেও সারাবিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে নেই কোন মতবিরোধ।শিয়াদের জন্যও অজুর চার ফরজ,সুন্নিদের জন্যও তাই এবং সারা বিশ্বের সকল মুসলিম একই ভাবে এগুলো আদায় করে থাকে। ইসলামের মূল কিতাব অর্থাৎ কুরআন পাকেই এসকল(অজু) ব্যাপারে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে। আর ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ(সা:)এর বাণী, হাদীসে পাকে এ ব্যাপারে সবিস্তারে উল্লেখ আছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই স্বয়ং হুযুর আকরাম(সা:)কর্তৃক এসকল বিষয় প্রবর্তিত ও প্রদর্শিত হয়েছে, যা আজ অবধি সেভাবেই চালু আছে।এগুলোর উৎপত্তি ইসলামের নবী(সা:)এর মৃত্যুর প্রায় পনেরশত বৎসর পরেও হয়নি।

অজু এবং ইবাদাত:

মুসলমানের জীবনের সব কাজই ইবাদাত হিসেবে গন্য। তবে আল্লাহপাকের বান্দা হিসেবে আল্লাহর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য (যা কি না মানুষের জীবনের চরম এবং পরম উদ্দ্যেশ্য) যে সব আমল একজন মুসলিম ব্যক্তিগত পর্যায়ে করে সে গুলোকে ইনফিরাদি আমল বা যাতি আমল বলে। যেমন;সুন্নাত ও নফল নামায, তিলাওয়াত,জিকরুল্লাহ, মুরাক্বাবা ইত্যাদি।
আর আল্লাহর একজন বান্দা হিসেবে অন্যান্য বান্দাদের সাথে সম্পর্ক কায়েম রাখার জন্য যে সব আমল একজন মুসলিম করে থাকে, তাকে সামাজিক ইবাদাত(মুয়ামালাত, মুয়াসারাত,আখলাকিয়াত) বলা হয়। যেমন:যাকাত, সাদকা, বিয়ে সাদী, কামাই-রোজগার ইত্যাদি।
সামাজিক ইবাদাতের জন্য অজু শর্ত রাখা হয়নি। কেননা এ খেত্রে খুশু-খুযু, ধ্যান বা মুরাকাবা জরুরী নয়। ধ্যান বা মনোযোগ ছাড়া দান করলেও তা আদায় হয়ে যাবে।কেননা দানের উদ্দেশ্য মালের মুহাববাত কমানো এবং তা নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ দিযে দিলেই কমে যায়,তাতে মনোযোগ থাকুক বা না থাকুক। সে কারনে অজু ছাড়া দান করলে বা যাকাত দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
কিন্তু নামায, তিলাওয়াত ইত্যাদি ধরনের ব্যক্তিগত ইবাদাতের জন্য অজু শর্ত রাখা হয়েছে (অজু ছাড়া নামায আদায় করা গুনাহ,ঠিক তেমনি অজু ছাড়া তিলাওয়াত অপছন্দনীয়)।কারন এ সমস্ত ইবাদাতে একাগ্রতার মাধ্যমে ঈমানের ঐ শক্তি অর্জন করা উদ্দেশ্য, যে শক্তি ব্যক্তির অন্যান্য সামাজিক ও আখলাকী ইবাদাতকে সুন্দর ও পরিপূর্ন করবে।
এ সমস্ত ব্যক্তিগত ইবাদাতে নিজের মনকে দুনিয়ার সব চিšতা থেকে (যা মানুষের মনকে সর্বদা আচ্ছন্ন করে রাখে) বের করে একমাত্র আল্লাহ পাকের দিকে কিছুক্ষন মনোনিবেশ করতে হয়। মনের এই গতি পরিবর্তন করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শরীরের ঐ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ধৌত করার প্রয়োজন হয়,যে অঙ্গ গুলো মনের সাথে বিশেষ ভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর ইবাদাতের পূর্বে অজুর গুরুত্ব এখানেই। এ কারনে হাদিস শরীফে বলা হয়েছে,‘‘পরিপূর্ণ ভাবে অজু করা ঈমানের অর্ধেক‘‘।(ইবনে মাজা)

আমাদের জাগতিক সমস্যা এবং অজু-নামাযের প্রায়োগিক সম্ভাবনা:

এক বছরের শিশু ক্ষুধা-তৃষ্ণা,শীত গরমের প্রয়োজন বুঝে।এ কারনে চকলেট সে সযত্নে খেয়ে ফেলে। কিন্তু, এই বাচ্চাই একশ টাকার নোটটি ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলে। কারন, তার জ্ঞান এখনও ঐ পর্যন্ত পৌছেনি-যার দ্বারা সে বুঝবে যে, এই টাকার দ্বারা সে চকলেট পেতে পারে। কিন্তু, এই বাচ্চার বয়স যখন ছয় সাত বৎসর হয়ে যায়,তখন সে টাকার যত্ন করে। কারন, ততোদিনে সে বুঝে ফেলেছে যে এই টাকাই তার প্রয়োজন পুরনের মাধ্যম।
তাই আমরা দেখি যে, প্রয়োজন বুঝতে পরিপক্কতার দরকার হয়না (শিশু জন্মের পরই ক্ষুধার প্রয়োজন বুঝে, তাই জন্মের পরই কাঁদে।কিন্তু, প্রয়োজন পুরন হওয়ার মাধ্যমকে বুঝতে ও শিখতে বয়সগত এবং মনোগত পরিপক্কতার দরকার হয়।
দ্বীনের ব্যাপারেও তাই; মানুষ যতক্ষন পর্যন্ত নামায কে তার প্রয়োজন পূরনের বা সমস্যা সমাধানের উপায় মনে না করবে, ততক্ষন পর্যন্ত নামাযের গুরুত্ব দিবেনা এবং এজন্য নামাযের চাবি যে ওযু, সেই অজুরও বাস্তবতা(হাকীকত)পর্যন্ত পৌছাতে পারবে না। যেমন নাকি ছোট শিশুকে চাবি দিয়ে তালা খুলে, না দেখানো পর্যন্ত সে চাবিকে শুধু এক খন্ড লোহাই মনে করতে থাকে। এ পর্যায়ে এসে নামাযের কতগুলো দিক সম্বন্ধে আবার গুরুত্ব সহকারে চিšতা করার দরকার পড়ে।
> নামায পুরো দ্বীন ইসলামের খুঁটি।
> নামাযকে পরিপূর্ন বা সুন্দর করার অর্থ, কোন ব্যক্তির জাগতিক এবং পারলৌকিক অন্যান্য কাজকেও সুন্দর ও পরিপূর্ন করা।
> মানুষের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রয়োজন বা সমস্যা, নামাযের দ্বারা সমাধান হয়ে থাকে।
প্রথম বিষয়ে এতটুকু বলা যায়; যে ব্যক্তি নামাযকে দুর্বল করল – সে তার দ্বীনকে (খুঁটি) দুর্বল করল। এ কারনে আমাদের বাস্তব জীবনের কর্মসূচীগুলো দ্বীন মোতাবেক হচ্ছে কিনা তার মিটার হলো নামায। এমন পেশা বেছে যদি নেই, যা দ্বারা আমার পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করা বিঘ্নিত হয়, তো বুঝতে হবে এ পেশা আমার দ্বীন সম্মত হচ্ছেনা। আবার এমনভাবে রাত জেগে নফল ইবাদত করা বা লাগাতার নফল রোজা রাখা শুরূ করলাম, যা দ্বারা ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা বিঘ্নিত হচ্ছে, তো বুঝতে হবে আমার এই ইবাদত সমুহও ইসলাম সম্মত হচ্ছেনা। এভাবে নামায দ্বীনি ও দুনিয়াবী উভয় জীবনে কম্পাসের মতো দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। [এখানে স্মরণ করা যেতে পারে ,হযরত উমর (রা:), বাজার তদারককারী ছাহাবী সুলাইমান ইবনে আবি হাছমার (রা:) রাত্রি জাগরনের কারনে ফজরের জামাতে হাযির না হওয়াকে মেনে নেন নি। হায়াতুছ ছাহাবা (রা:)]
দ্বিতীয় বিষয় সম্পর্কে এতটুকু বলা যায়, যে ব্যক্তি তার নামাযকে সুন্দর করল, সে তার জীবনের অন্যান্য কাজ গুলোকেও সুন্দর করল। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যার নামায সুন্দর হয়, তার দুনিয়াবী জীবনও সুন্দর হয়। নামায হলো কমপিউটারের প্রোগ্রামের মত। যে কম্পিউটারের মগজে যত শক্তিশালী প্রোগ্রাম থাকে, সেই কম্পিউটার দ্রুত ও সাবলীল কাজ করে। আর যে কম্পিউটারের প্রোগ্রামে ভাইরাস থাকে, তার কাজ পদে পদে বাধাগ্রস্থ ও ধীর হয়ে পড়ে।
কোয়ান্টাম মেথড, সিলভা মেথড, যোগ ইত্যাদি নামে প্রচলিত মন নিয়ন্ত্রন প্রথার সার কথাঃ
উপর্যুক্ত প্রথাগুলোর সার কথা হল, শরীর ও মনকে অন্যান্য সকল কাজ ও বিষয় থেকে আলাদা করে, কোন নির্জন স্থানে বসে, মনকে শান্ত করে, মনের এক বিশেষ অবস্থায় গিয়ে, মানুষ যে সমস্ত বিষয়ে আত্মপ্রত্যয় স্থির করে, ধ্যানের বাইরে ঐ সমস্ত বিষয় আয়ত্ত করা তার জন্য সহজ হয় এবং কাঙ্খিত বস্তু পাওয়ার রাস্তায় অযাচিত বাধা সমূহ সহজে পরিহার করা যায়।
প্রোগ্রাম সম্বলিত একটি ডিস্ক কম্পিউটারের গায়ে ছুঁয়ে দিলেই প্রোগ্রামটি কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে না। বরং এজন্য কম্পিউটারের মেকানিজমকে একটি বিশেষ অবস্থানে নিয়ে আসতে হয়। তেমনি মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জাগতিক সমস্যা দূর করার উদ্দেশ্যে আত্মপ্রত্যয়কে একটা বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে আসতে হয়।
আর নামায এ ব্যাপারে সহায়তা করে নিঃসন্দেহে, যা হলো আল্লাহ পাকের ধ্যান। আল্লাহ পাক প্রদত্ত এই ধ্যানের মাধ্যম হচ্ছে নামায, যা সুন্দর ভাবে আদায় করলে, খুশু ও খুজুর সাথে আদায় করলে, মনের উপর ঐ নিয়ন্ত্রন হাসিল হয়, যা নামাযী ব্যক্তিকে নামাযের বাইরেও সঠীক পথে পরিচালিত করে।
মেডিটেশন প্রচার কারি ভাইগন প্রায়ই বলে থাকেন যে, আমাদের কোর্সগুলো ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকলেই করতে পারেন। কারন ধর্মের সাথে (অর্থাৎ প্রভূর সাথে) এর কোন সম্পর্ক নেই। বরং এখানে মানুষকে তার মনের শক্তি শেখানো হয়।
আর ইসলামের শিক্ষা হলো: দূর্বল,মরনশীল মানুষ (খুলিকাল ইনসানা জায়িফা) নয় বরং চিরন্জীব মহা পরাক্রমশালী একমাত্র আল্লাহপাকই পেরেছেন, পারেন এবং পারবেন। মেডিটেশনের অনুসারীরা যেখানে আল্লাহ পাকের দায়িত্বটিও (ওমা মিন দাআব্বতিন ফিল আরদি ইল্লা আলাল্লাহি রিযকুহা) নিজে ঘাড়ে নিয়ে বোঝার ভারে নিষ্পেষিত হয়, সেখানে নামাযী নিজের সমস্ত দায়িত্ব আল্লাহ পাকের হাতে তুলে দিয়ে ভার মুক্ত হয়।
এখানে আরও একটি বিষয় ভেবে দেখার মতো। কেউ যদি বন্দুকের গুলির সদ্ব্যবহার করতে চায়,তবে তার একটি বাহ্যিক নিশানা থাকতে হয়। আবার গাছে উঠে গাছের সব ডাল কাটতে হলে,একটি ডালকে মজবুত করে ধরতে হয়।তেমনি ধ্যান করতে বসে মনের একাগ্রতা হাসিলের জন্য মনের সব চিন্তা দূর করতে হলে একটি সাপোর্টের দরকার পড়ে। ক্বিবলা এবং অজুর ব্যবস্থা করে ইসলাম এই প্রয়োজান সমাধান করে দিয়েছে।
মানুষের এ মনের গভীর অবস্থা দীর্ঘক্ষন বজায় রাখার জন্য অভ্যন্তরিন একটি দৃঢ় ভিত্তি থাকতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালার জাত ও ছিফতের চিšতা মানুষকে মজবুত এবং অতি বিশ্বস্ত (ইয়াকীনি) রজ্জু দান করে যা আঁকড়ে ধরে মন নিজেকে স্থির রাখে।
ধর্মহীন, ইসলামহীন মেডিটেশনে সমস্ত গুরুত্বপুর্ণ উপাদান কোথায়?
তিন নম্বর বিষয়টি আমাদের অনেকের কাছেই নতুন মনে হতে পারে। আর তা হলো,যে কোন প্রয়োজনের সময় বা সমস্যার সময় নামাযের মাধ্যমে আল্লাহপাকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। এভাবে নামাযের দ্বারাই মানুষের দুনিয়াবি প্রয়োজন সমুহ এবং সমস্যা সমুহ সুন্দর ও সহজ ভাবে সমাধান হয়ে যায়। নবী(সা:) এবং সাহাবীদের(রা:) জীবনীই এর প্রমান। নামাযের দ্বারা অন্নহীন ঘরে খাবারের ব্যবস্থা করা, মরা গাধা জিন্দা করা, এমনকি মৃত সন্তানকে জিন্দা করার ঘটনাও ছাহাবীদের জীবনে কোন আশ্চার্যজনক বিষয় ছিলনা।(হায়াতুস সাহাবাহ্-হযরত মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী)। নামাযের মাধ্যমে দুনিয়াবী সমস্যার সমাধান কেমন করে হয়ে থাকে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। তবে এখানেও যে মনের একাগ্রতার একটা বিষয় আছে তা সহজেই বুঝা যায়।
মানুষ যখন সমস্যায় পতিত হয় (যেমন, সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ল) তখন তার সামনে সমাধানের অনেকগুলো বা একাধিক সুযোগ থাকে, যার সবগুলো কিন্তু সুবিধাজনক নয়।(এ ক্ষেত্রে যেমন:- কেউ বলল – চিকিৎসার দরকার নেই আল্লাহ ভরসা করে থাকো, কেউ বলল – কবিরাজ বা ওঝা ডাকো, কেউ বলল – নিকটস্থ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে যাও, কেউ বলল – শহরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হও।) এমন সঙ্কটাপন্ন সময়ে উক্ত ব্যক্তির মন যদি সঠিক এর দিকে সায় দেয়, তবে সমাধান সহজে হয়ে যাবে। আর মন যদি এলোমেলো হয়ে যায়, তো সমস্যা বাড়বে। এক্ষেত্রে মনকে সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করতে হবে স্থিরতা দ্বারা। জাহাজের কম্পাস স্থির অবস্থায় যেমন সঠিক দিক নির্দেশ করে, তেমনি নামাযে দাঁড়িয়ে মনকে স্থির করলে মনের গতি সঠিক পথের দিকে ধাবিত হবে।(ইয়া আই্যায়াতুহান্নাফসুল মুতমায়িন্না —)। এভাবে নামায মানুষের দুনিয়ার সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।
উপরের তিনটি বিষয়কে এক সঙ্গে সামনে রাখলে বোঝা যায় যে নামায হলো একটি ধ্যান যার প্রধান দুটি অংশ:
# মনকে দুনিয়াবী সমস্ত ব্যাপার থেকে আলাদা করা, এবং
#এই খালেছ মনকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করা। এই প্রধান দুটি কাজের প্রথমটি করে দেয় অজু (অজু করার সঙ্গে সঙ্গে মন থেকে অন্যান্য চিন্তা দুর হয়ে যায়। মন বুঝে ফেলে; সব বাদ দিয়ে আমাকে এখন আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হতে হবে)। আর একারনেই বলা হয়েছে “ অজু হল নামাযের চাবি ”।

অজুর সঠিক নিয়ম, সুন্নাতসমূহ ও অজু ভংগের কারণগুলো

অজুর নিয়ম ও কনুইদ্বয়-গোড়ালিদ্বয় ধৌত করার বিধান
আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াতে মনস্থ কর তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ধৌত কর…আয়াতের শেষ পর্যন্ত। আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণ হলো যে, অজুতে তিনটি অংগ ধোয়া এবং মাথা মাসহ করা ফরজ। ধোয়া, (পানি) প্রবাহিত করা। আর (ভিজা হাত) লাগান। আর মুখমণ্ডলের সীমা। (কপালের উপরের) চুলের গোড়া থেকে চিবুকের নীচ পর্যন্ত এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত। কেননা, (মুখমণ্ডল) শব্দটি (মুখোমুখি হওয়া) থেকে উদ্ভূত্। আর এ পুরা অংশের দ্বারাই সামনা সামনি হওয়া সংগঠিত হয়।
কনুইদ্বয় ও গোড়ালিদ্বয় ধৌত করার বিধানের অন্তর্ভূক্ত। আমাদের তিন ইমামের মতে। যুফার (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সীমানা তার পূর্ববর্তী অংশের অন্তর্ভূক্ত হয় না, যেমন সাওম সম্পর্কিত বিধানে রাত্রি অন্তর্ভূক্ত নয়। আমাদের যুক্তি এই যে, এ সীমানার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার পরবর্তী অংশকে বহির্ভূত করা। কারণ, যদি সীমানার উল্লেখ না থাকত তবে ধোয়ার হুকুম পুরো হাতকে শামিল করতো। পক্ষান্তরে সাওমের ক্ষেত্রে সীমানা উল্লেখের উদ্দেশ্য হল সে পর্যন্ত হুকুমের বিস্তার ঘটানো। কেননা শব্দটি সামান্য সময়ের বিরতির উপর ব্যবহার হয়। বিশুদ্ধ মতে পায়ের গোড়ায় বের হয়ে থাকা হাড়। এ থেকে উদ্ভিন্ন স্তন তরুণীকে বলা হয়। গ্রণ্থকার বলেন, মাথা মাসহ-এর ক্ষেত্রে মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ স্পর্শ করা ফরজ। কেননা মুগীরা ইবন শুবা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) একবার বস্তির আবর্জনা ফেলার স্থানে এসে পেশাব করে অজু করলেন। তখন তিনি মাথার সম্মুখভাগ এবং মোজা মাসহ করলেন।
যেহেতু আল-কোরানের বক্তব্য এখানে পরিমাণের দিক থেকে অস্পষ্ট, সেহেতু আলোচ্য হাদীছটি তার ব্যাখ্যা রুপে যুক্ত করা হয়। এ হাদীছটি ইমাম শাফিঈ (র.) কর্তৃক তিন চুলের দ্বারা নির্ধারণের বিপক্ষে প্রমাণ। তদ্রুপ ইমাম মালিক (র.) কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ মাসহ শর্ত করার বিপক্ষে প্রমাণ। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, আমাদের ইমামদের মধ্যে কেউ কেউ ফরজ মাসহর হাতের তিন আংগুল পরিমাণ করেছেন।কেননা তা প্রকৃতপক্ষে যে অঙ্গ দ্বারা মাসহ করা হয়, তার সিংহভাগ।

অজুর সুন্নাতসমূহ

গ্রন্থকার বলেন, অজুর সুন্নাত হলো
০১. পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে উভয় হাত ধোয়া, যখন অজুকারী তার নিদ্রা থেকে উঠে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পাত্রে না ডুবায়। কেননা, সে জানে না, নিদ্রিত অবস্থায় তার হাত কোথায় ছিলো (অর্থাত্ কোন অংগ স্পর্শ করেছিল)। তাছাড়া হাত হলো তাহারাত সম্পাদনের উপকরণ। সুতরাং তার পবিত্রকরণের মাধ্যমে শুরু করাই সুন্নাত। এ হাত ধৌত করার পরিমাণ কবজি পর্যন্ত। কেননা, তাহারাত সম্পাদনের জন্য অতটুকুই যথেষ্ট।
০২. অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ্ বলা। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, যে বিসমিল্লাহ্ বলেনি তার অজু হয়নি। এখানে উদ্দেশ্য হলো, অজুর ফজিলত হাসিল হবে না। বিশুদ্ধ মত হল, অজুতে বিসমিল্লাহ্ বলা মুস্তাহাব। যদিও (মূল পাঠে)তাকে সুন্নাত বলেছেন। এবং ইস্তিনজার আগে ও পরে বিসমিল্লাহ্ বলরে; এ-ই সঠিক মত।
০৩. মিসওয়াক করা। কেননা নবি (সা.) সব সময় তা করতেন। মিসওয়াক না থাকলে আংগুল ব্যবহার করবে। কেননা নবি (সা.) এরুপ করেছেন।
০৪. কুলি করা।
০৫. নাকে পানি দেয়া, কেননা নবি (সা.) সবসময় উভয়টি করেছেন। এ দু’টির পদ্ধতি এই যে, তিনবার কুলি করবে এবং প্রতিবার নতুন পানি নিবে। একইভাবে নাকে পানি নিবে। নবি (সা.)-এর অজুতে এরূপ বর্ণনায় এসেছে।
০৬. উভয় কান মাসহ করা। মাথা মাসহ এর (অবশিষ্ট) পানি দ্বারা তা সম্পাদন করা সুন্নাত। ইমাম শাফিঈ ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের দলীল হলো নবি (সা.) বলেছেনঃ কর্ণদ্বয় মাথারই অংশ বিশেষ।এর উদ্দেশ্য হল শরিয়তের হুকুম বর্ণনা করা, সৃষ্টিগত অবস্থা বর্ণনা করা নয়।
০৭. দাড়ি খেলাল করা। কেননা হযরত জিবরীল নবি (সা.)-কে তা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এটি আবূ ইউসূফের মতে সুন্নাত। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা ও মুহাম্মদ (র.)-এর মতে তা (সুন্নাত নয়) বৈধ মাত্র। কেননা, সুন্নাত হল এমন কাজ, যা দ্বারা ফরজকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হয়। অথচ দাড়ির ভিতরের অংশ (মুখমণ্ডল ধৌত করা) ফরযের স্থান নয়।
০৮. আংগুল খেলাল করা। কেননা নবি (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের আংগুলসমূহ খেলাল কর, যাতে জাহান্নামের আগুন তাতে প্রবেশ না করে। আর এ ভাষ্য যে, এ দ্বারা ফরজকে তার স্থানে পূর্ণতা দান করা হচ্ছে।
০৯. তিনবার পর্যন্ত পুনঃ ধৌত করা- কেননা নবি (সা.) একেকবার করে ধৌত করেছেন এবং বলেছেন, এটা এমন অজু, যা না হলে আল্লাহ্ সালাত কবুলই করবেন না। আবার দু’ দুবার করে ধৌত করেছেন এবং বললেন, এটি ঐ ব্যক্তির অজু, যাকে আল্লাহ্ দ্বিগুন বিনিময় দান করবেন। এরপর তিন তিন বার ধৌত করে বললেন, এটা আমার অজু এবং আমার পূর্ববর্তী নবিদের অজু। যে এর বেশী বা কম করবে, সে সীমালংঘন করল ও অন্যায় করল। অবশ্য এই কঠোর হুশিঁয়ারি হচ্ছে তিনবার করে ধোয়াকে সুন্নাত বলে বিশ্বাস না করার জন্য।

অজু ভংগের কারণগুলো

০১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে যে কোন কিছু বের হওয়া। কেননা আল্লাহ্ বলেছেন তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-জিঞ্জাসা করা হলো কি? তিনি বললেন, পেশাব ও পায়খানা দু’দ্বারে যা রের হয়। আলোচ্য হাদীছের যা কিছু শব্দটি ব্যাপকতা জ্ঞাপক। সুতরাং প্রকৃতিগত ও অপ্রকৃতিগত সবকিছুই এর অন্তর্ভূক্ত।
০২. দেহের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে যদি পাক করার বিধান প্রযোজ্য হয় এমন স্থান অতিক্রম করে।
০৩. মুখ ভর্তি বমি। ইমাম শাফিঈ (রা.) বলেন, পেশাব পায়খানার রাস্তা ছাড়া (দেহের অন্য কোন স্থান থেকে) কিছু বের হলে অজু ভংগ হবে না। কেননা বর্ণিত আছে যে, নবি করিম (সা.) বমি করে অজু করে নি। তাছাড়া যে স্থানে নাজাসাত স্পর্শ করেনি, তা ধৌত করা যুক্তি-ঊর্ধ্ব করণীয় বিধান। সুতরাং শরিয়তের নির্দেশিত স্থানে তা সীমিত থাকবে। আর তা হল প্রকৃতিগত পথ। আমাদের প্রমাণ হলো, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেনঃ সকল প্রবাহিত রক্তের জন্যই অজু আবশ্যক। তিনি আরো বলেছেন, সালাত অবস্থায় কারো বমি হলে কিংবা নাকে রক্ত ঝরলে সে যেন ফিরে গিয়ে অজু করে এবং পূর্ববর্তী সালাতের উপর ‘বিনা’ করে যতক্ষণ না কথা বলবে।
আর যুক্তি হলো নাজাসাত নির্গত হওয়া তাহারাত ও পবিত্রতা ভংগের কারণ মূল আয়াতের এতটুকু তো যুক্তিসংগত।অবশ্য নির্দিষ্ট চার অংগ ধোয়ার নির্দেশ যুক্তির ঊর্ধ্বে। কিন্তু প্রথম বিষয়টি স্থানান্তরিত হলে দ্বিতীয় বিষয়টিও স্থানান্তরিত হওয়া অনিবার্য হবে। তবে নির্গত হওয়া তখনই সাব্যস্ত হবে, যখন তা তাহারাতের হুকুমভূক্ত কোন অংশ গড়িয়ে পৌঁছবে। আর বমির ক্ষেত্রে যখন তা মুখ ভরে হবে। কেননা, ‘আবরণত্বক’ উঠে গেলে রক্ত বা পুঁজ স্বস্থানে প্রকাশ পায় মাত্র; নির্গত হয় না।
পক্ষান্তরে পেশাব-পায়খানার পথ দু’টি ব্যতিক্রম (অর্থাত্ সেখানে নাজাসাত দেখা গেলে অজু ভংগ হয়েছে বলে ধরা হবে) কেননা, তা নাজাসাতের প্রকৃত স্থান নয়। সুতরাং সেখানে নাজাসাতের প্রকাশ থেকেই তার ‘স্থানচ্যুতি ও নির্গত হওয়া প্রমাণিত হবে। মুখ ভরা বমির অর্থ হলো, অনায়াসে যা আটকানো সম্ভব নয়। কেননা, দৃশ্যতঃ তা নির্গত হতে বাধ্য। সুতরাং নির্গত হয়েছে বলেই গণ্য হবে। ইমাম যুফার (র.) বলেন, অল্প ও বিস্তর বমি সমপর্যায়ের। তদ্রূপ (রক্তের ক্ষেত্রেও তিনি) প্রবাহিত হওয়ার শর্ত আরোপ করেন না। পেশাব-পায়খানার স্বাভাবিক নির্গত হওয়ার স্থানের উপর কিয়াস করে।
তাছাড়া নবি করীম(সা.)-নিম্নোক্ত বাণী, বমি অজু ভংগের কারণ হচ্ছে শর্তমুক্ত। আমাদের প্রমাণ হল নবি করীম (সা.)-এর হাদীছ, প্রবাহিত না হলে এক দু’ফোঁটা রক্ত বের হলে অজু আবশ্যক নয়। এবং হযরত আলী (রা.) অজু ভংগের সবক’টি কারণ গণনা প্রসংগে বলেছেন,(মুখ ভরা বমি) এখানে যখন হাদীছগুলো পরস্পর বিরোধী তখন (সমন্বয়ের জন্য) ইমাম শাফিঈ (র.) বর্ণিত হাদীছকে অল্প বমির উপর এবং ইমাম যুফার বর্ণিত হাদীছকে বেশী বমির উপর ধরা হবে। পক্ষান্তরে পেশাব-পায়খানার রাস্তা এবং অন্যান্য স্থান থেকে নাজাসাতে নির্গত হওয়ার পার্থক্য ইতোপূর্বে আমরা বলে এসেছি।
যদি বিভিন্ন দফায় এত পরিমাণ বমি করে যে, একত্র করা হলে তা মুখ ভর্তি পরিমাণ হবে, তখন ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে স্থানের অভিন্নতা বিবেচ্য হবে। এবং ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে বমনোদ্রেককারী হেতু অর্থাত্ উদগারের অভিন্নতা বিবেচ্য। ইমাম আবূ ইউসূফ থেকে বর্ণিত যে, পদার্থ অজু ভংগের কারণ নয়, তা নাপাকও গণ্য নয়; ইমাম আবূ ইউসূফের যুক্তি এই যে, (উদারস্থ) শ্লেষ্মা নাজাসাতের সংস্পর্শহেতু নাজাসাত রূপে গণ্য।
আর যদি কেউ রক্তবমি করে এবং তা জমাট হয়, তবে এতে মুখ ভরতি বিবেচনা করা হবে। কেননা মূলতঃ তা পিত্ত-নিঃসৃত গাঢ় কাল পদার্থ। আর যদি তরল হয়, তবে ইমাম মুহম্মদ (র.) এর মতে, অন্যান্য প্রকার বমির নিরিখে এক্ষেত্রেও অনুরূপ মুখ ভর্তি হওয়া বিবেচ্য। অন্য দুই ইমামের মতে, যদি স্বতঃস্ফূর্ত বেগে প্রবাহিত হয় তাহলে অল্প হলেও অজু ভেংগে যাবে। কেননা পাকস্থলী রক্তের স্থান নয়। সুতরাং তা উদরস্থ কোন ক্ষত থেকে নির্গত হয়েছে বলে গণ্য হবে। (আর রক্ত) মাথার ভিতর থেকে গড়িয়ে নাকের নরম অংশ পর্যন্ত উপনীত হলে সর্বসম্মত মতে অজু ভেংগে যাবে। কেননা তা তাহারাতের হুকুমভূক্ত অংশে চলে এসেছে। সুতরাং নির্গত হওয়া সাব্যস্ত।
৪. ঘুমানো-কাত হয়ে কিংবা হেলান দিয়ে কিংবা এমন কিছুতে ঠেস দিয়ে য়ে, তা সরিয়ে দিলে সে পড়ে যাবে। কেননা, পার্শ্ব শয়ন শরীরের গ্রন্থিগুলোর শিথিলতার কারণ। ফলে এ অবস্থা স্বভাবতই কিছু (বায়ু) নির্গত হওয়া থেকে মুক্ত নয়। আর স্বভাবতঃ যা বিদ্যমান তা ইয়াকিনী বিষয় বলে গণ্য। আর তা হেলান অবস্থায় ঘুম আসলে ভূমির সাথে নিতম্বের সংলগ্নতা না থাকার কারণে জাগ্রতাবস্থার নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত হয়। আর কিছুতে উক্ত প্রকার ঠেস দিয়ে ঘুমালে অংগ শৈথিল্য চরমে পৌছে যায়। ঠেকনাটি তার পড়ে যাওয়া থেকে বাচিয়ে রাখে পক্ষান্তরে (সালাতে বা সালাতের বাইরে) দাড়ানো, বসা, রুকু ও সাজদা অবস্থার ঘুম তেমন নয়। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা, আংশিক নিয়ন্ত্রণ তখনো বহাল থাকে, তা না হলে তো পড়েই যেতো। সুতরাং পুরোপুরি অঙ্গ শিথিল হয় না। এ বিষয়ে মূল ভিত্তি হলো নবি (সা.) এর বাণী, দাড়িয়ে, বসে,রুকুতে বা সাজদায় যে ঘুমায়, তার উপর অজু আবশ্যক নয়। অজু আবশ্যক হলো তার উপর, যে প্বার্শে ভর দিয়ে ঘুমায়, কেননা পার্শ্বের উপর ঘুমালে তার গ্রন্থি শিথিল হয়ে পড়ে।
৫. এমন সংজ্ঞাহীনতা, যাতে বোধ-লোপ পায়।
৬. অপ্রকৃতিস্থতা। কেননা, এগুলো অংগ শৈথিল্যের ক্ষেত্রে পার্শ্ব শয়নের চাইতেও বেশী ক্রিয়াশীল। সংজ্ঞাহীনতা সর্বাবস্থায় অজু ভংগের কারণ। ঘুমের ক্ষেত্রও কিয়াস ও যুক্তির দাবী এটাই ছিল। কিন্তু ঘুমের ক্ষেত্রে উক্ত পার্থক্য আমরা হাদীছ থেকে পেয়েছি। সংজ্ঞাহীনতা কে আবার নিদ্রার উপর কিয়াস করার সুযোগ নেই। কেননা তা নিদ্রার চাইতে বেশী প্রবল।
৭. রুকু-সাজদাবিশিষ্ট সালাতে অট্টহাসি। অবশ্য কিয়াস ও যুক্তির দাবী হল অজু ভংগ না হওয়া। ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতও তাই। কেননা তা নির্গত নাজাসাত নয়। এ কারণে সালাতুল জানাযায়, তিলাওয়াতের সাজদায় এবং সালাতের বাইরে তা অজু ভংগের কারণ নয়। আমাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর বাণী, শুনো, তোমাদের কেউ অট্টহাসি করলে অজু ও সালাত উভয়ই পুনরায় আদায় করবে।বলা বাহুল্য যে, এ ধরনের (মশহুর হাদীছ) দ্বারা কিয়াস করা হয়ে থাকে। তবে হাদীছটি যেহেতু পূর্ণ আকারের সালাত সম্পর্কিত, সেহেতু তার হুকুম তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অট্টহাসি হলো যা নিজে এবং পার্শ্ববর্তী শুনতে পায়। আর হাসি হলো যা নিজে শোনতে পায়, কিন্তু অন্যরা শুনতে পায় না। আর কেউ কেউ বলেছেন যে, হাসি দ্বারা অজু নষ্ট হয় না, কিন্তু সালাত ফাসিদ হয়ে যায়।
৮. পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কীট বের হলে তা অজু ভংগকারী হবে। তবে ক্ষতস্থান থেকে কীট বের হলে বা মাংসখণ্ড খসে পড়লে অজু ভংগ হবে না। মূল পাঠে ‘দাব্বা’ দ্বারা উদ্দেশ্য ‘কীট’ কেননা (মূলতঃ কীট নাজাসাত নয় বরং) তার দেহ লেগে থাকা পদার্থ হলো নাজিস বা নাপাক এবং তা অতি অল্প। আর অল্প নাজাসাত পেশাব-পায়খানার রাস্তায় নির্গত হওয়া অজু ভংগের কারণ। কিন্তু অন্য স্থান থেকে অল্প বের হওয়া অজু ভংগের কারণ নয়। তাই (অন্য স্থান থেকে অল্প বের হওয়া) ঢেকুরের সঙ্গে তুলনীয় এবং (পেশাব-পায়খানার রাস্তা থেকে অল্প বের হওয়া) নিঃশব্দ বাতকর্মের সাথে তুলনীয়। পক্ষান্তরে নারী অথবা পুরুষের পেশাবের রাস্তা দিয়ে নির্গত বায়ু অজু ভংগকারী নয়। কেননা তা নাজাসাতের স্থান থেকে সৃষ্ট নয়। তবে ‘উভয় পথ সংযূক্ত এমন কোন নারীর বায়ু নির্গত হলে তার জন্য অজু করে নেয়া মুসতাহাব।কেননা, সেটা পিছনের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
কোন ফোড়া-ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে তা থেকে পানি-পুজ ইত্যাদি গড়িয়ে যদি ক্ষতস্থানের মুখ অতিক্রম করে তাহলে অজু ভংগ হবে, আর পানি যদি অতিক্রম না করে তবে অজু ভংগ হবে না। ইমাম যুফার (রা.) এর মতে উভয় অবস্থায় অজু ভংগ হবে। ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতে উভয় অবস্থাতেই অজু ভংগ হবে না। মূলতঃ এটা পেশাব-পায়খানার রাস্তা ছাড়া ভিন্ন পথে নাজাসাত নির্গত হওয়ার মাসআলার সাথে সম্পৃক্ত। এই সমস্ত পানি পুজ ইত্যাদি অবশ্যই নাজিস। কেননা এগুলো মূলতঃ রক্ত, পর্যায়ক্রমে পক্ক হয়ে নির্গত ক্লেদ এবং আরো বেশী পক্ক হওয়ার পর পুজ, এরপর এই পার্থক্য তখনই হবে যখন আবরণ-ত্বক সরিয়ে ফেলার কারণে তা আপনা আপনি বের হয়। পক্ষান্তরে চিপ দেওয়ার কারণে বের হলে অজু ভংগ হবে না। কেননা (হাদীছ) বা নির্গত শব্দ রয়েছে, অথচ) এটা নির্গত নয়, বরং নিঃসরণ করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

নামাজের সময় এবং আধুনিক বিজ্ঞান

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাৎ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। জামাতে নামাজ পড়া একই সঙ্গে উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।

ফজরের সময় : যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন সূর্য উদয় হওয়ার আগে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ের নামাজ হালকা প্রকৃতির। সারারাত আরাম করার পর ওই সময় পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। নামাজি এই চার রাকাত নামাজ পড়ে শারিরীক ও মানসিকভাবে উপকৃত হয়। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয়ায় উদ্দীপনা ফিরে পায়। মস্তিষ্ক চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবেহ সাদিকের সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে যে সূক্ষ্ম অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

জোহরের সময় : দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। রোগ-জীবানু হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে শ্রান্তিও অনুভূত হয়। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করায় দেহমনে পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রফুল্লতা আসে। এর ফলে রোগের কোনো আশঙ্কাও থাকে না।

ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তি অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা শ্রান্তি দূর হয়ে যায়। এসব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।
আসরের সময় : জ্ঞানবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এবং বিজ্ঞ মাত্রেই জানেন, পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে চলে। এগুলো হলো : লম্ব ও বৃত্তীয়।

যখন সূর্য ঢলতে থাকে, তখন পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে, এমনকি আসরের সময় ঘূর্ণনের পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। এ কারণে মানুষের ওপর দিনের অনুভূতি প্রবল হতে থাকে, প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত হতে থাকে। আসরের নামাজের সময় মানুষের সচেতন অনুভূতির ওপর অচেতন অনুভূতির প্রভাব শুরু হয়, যার দ্বারা মানুষ আরামদায়ক অনুভূতি লাভ করে।

মাগরিবের সময় : মানুষ সারাদিন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটায় এবং নিজ ও পরিবারের জন্য রুজি-কামাই করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করে যে, সেই মহান সত্তা এগুলো অর্জন করার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। এটি আনন্দের মধ্যে হয়, যার দ্বারা অন্তর এক বিশেষ প্রকারের আনন্দ অনুভব করে। মাগরিবের সময় সে আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজিরা দিয়ে নিজ দাসত্বকে প্রকাশ করে, আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে। মানুষের এই আকুতি তাকে নূরানী তরঙ্গমালায় আচ্ছাদিত করে এবং তার আত্মাকে প্রশান্তি প্রদান করে।

এশার সময় : মানুষ স্বভাবগতভাবে রাতে বাড়ি ফিরে সুস্বাদু খাবার খায়। যখন সে কাজকর্ম থেকে ঘরে ফিরে আসে, খানা খায় এবং স্বাদ ও লোভের কারণে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। যদি সে খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়ে, তাহলে সে ধ্বংসকারী রোগের শিকার হয়। মানুষ সারাদিনের ক্লান্তির পর খাবার খেয়ে তৎক্ষণাৎ শুয়ে পড়লে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শোয়ার আগে এবং অতিরিক্ত খানা খাওয়ার পরে কমবেশি ব্যায়াম করে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এশার নামাজ সে ক্ষেত্রে আন্শিক চাহিদার পাশাপাশি দৈহিক চাহিদা অর্থাৎ ব্যায়ামের কাজটিও করে।

নামাজ ৫ ওয়াক্ত ফরয হল কেন? তার হেকমতঃ

* আল্লাহ তাআলা দুনিয়া জানা ও বুঝার জন্য মানুষকে ৫টি শক্তি দিয়েছেন-
১। দৃষ্টিশক্তি
২। শ্রবণশক্তি
৩। ঘ্রাণশক্তি
৪। আস্বাদন শক্তি
৫। অনুভূতি শক্তি
অতঃপর এই ৫ শক্তির মোকাবেলায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করে দিয়েছেন।
* আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম মানুষকে প্রাণ দান করেছেন। তারপর বড় বড় ৫টি নেয়ামত দানে ধন্য করেছেন।
১। খাবার ও পানীয়
২। পোশাক
৩। গৃহ
৪। সেবার জন্য স্ত্রী ও সেবক
৫। ভ্রমণের জন্য আরোহী
প্রানের শুকরিয়া হল কালিমায়ে তায়্যেবা। আর বাকী ৫টি নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ ৫ওয়াক্ত নামাজ ফরয করা হয়েছে।
* মানুষের জীবন ৫ অবস্থায় অতিবাহিত হয়-
১। শয়ন
২। বৈঠক
৩। দাঁড়ানো
৪। নিদ্রা
৫। জাগ্রত
এ ৫ অবস্থায় মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বান্দার ওপর অগণিত নেয়ামত বর্ষিত হতে থাকে; যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা ৫অবস্থার নেয়ামত সমূহের শুকরিয়া ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে রেখে দিয়েছেন।
* হায়াত শেষে মানুষের ওপর ৫টি বিপদ আসে-
১। মওত
২। কবর
৩। পুলসিরাত
৪। বাম হাতে আমলনামা
৫। জান্নাতের দরজা বন্ধ থাকা
মহান আল্লাহ তাআলা উক্ত ৫টি বিপদ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করে দিয়েছেন।

কোরআন হাদিস ও বিজ্ঞানের আলোকে নামাজ

আলহাজ ডা. আঃ বাতেন : নামাজ সকল প্রকার গুনাহর কাজ থেকে বাঁচার শক্তি জোগায়। যে ব্যক্তি অতি মনোযোগের সাথে আল্লাহকে হাজের নাজের জেনে ভক্তিসহকারে নামাজ আদায় করে, সেই নামাজ ওই ব্যক্তিকে সকল প্রকার গুনাহর কাজ থেকে বাঁচার রূহানি বা আধ্যাত্মিক শক্তি দান করে থাকে। দুনিয়াতে যত ইবাদত আছে তার মধ্যে নামাজই আল্লাহকে রাজি খুশি করার একমাত্র ইবাদত। বান্দা যখন আল্লাহকে খুশি ও রাজি করার জন্য অতিভক্তি এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে আল্লাহকে সেজদা করে তখন আল্লাহপাক ওই বান্দাকে খুবই আপন করে গ্রহণ করেন। দুনিয়ার সমস্ত ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করলে আল্লাহপাক যতটুকু খুশি হন মুমিন বান্দা নিজের হাস্তিকে অর্থাৎ নিজের আমিত্বকে বিলীন করে আল্লাহকে সেজদা দিলে তিনি তার চেয়েও বেশি খুশি হন।
আল্লাহপাক কুরআন পাকে বহুবার আদেশ করেছেন যে, আমি মানুষ ও জিনকে আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি (সূরা জারিয়াত : ৫৬)।
পৃথিবীর সকল জাতির মধ্যে মহান স্রষ্টার ইবাদত করা প্রত্যেক ধর্মের বিধানের অন্তর্ভুক্ত। যে জাতির মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তির অভাব অর্থাৎ যে জাতি আল্লাহর প্রকৃত ইবাদত থেকে বিরত থাকে তারাই প্রকৃত অসহায় হয়। পাক কোরআনে আল্লাহপাক আদেশ করেছেন যে, হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনার ওপর যে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে তা আপনি পড়–ন ও নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ প্রতিরোধকারী (সূরা আনকাবুত-৪৫)।
এখানে কুরআন পাঠ করার পরই অর্থাৎ আল্লাহর ওপর ঈমান আনার পরই আল্লাহপাক নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন। নিয়মিতভাবে মনোযোগ সহকারে দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া মুসলমানদের জন্য ফরজ। নবী করিম (সাঃ) হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন যে, শেরেক ও কুফুরি প্রভৃতি বৃহত্তম গুনাহ ছাড়া নামাজ মানুষের দৈনন্দিন সকল গুনাহ বা অপরাধ ক্ষমাকারী ও সংশোধক। যারা নিয়মিতভাবে নামাজ পড়ে থাকেন তারা অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে না তা প্রত্যক্ষ সত্য। এজন্য নামাজ ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বলে নির্দিষ্ট হয়েছে। নামাজ বেহেশতের চাবি ও সকল ইবাদতের মূল ভিত্তি। ইমানদারের জন্য নামাজ আল্লাহর সাথে দিদার বা সাক্ষাৎ, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একমাত্র উপায়। নামাজ ব্যতীত কেউই আল্লাহর অলী বা প্রিয় ব্যক্তি হতে পারে না। হাশরের দিন সর্বপ্রথম আল্লাহপাক নামাজের হিসাব চাইবেন। আল্লাহর সাথে মানুষের রুহের বা আত্মার সংযোগই হল নামাজের উদ্দেশ্য। আল্লাহর ধ্যান ও স্মরণই নামাজের প্রাণ, প্রাণহীন বা মনোযোগহীন নামাজে কোন ফায়দা হাসিল হয় না বা উপকারে আসে না। বরং অমনোযোগী ও উদাসীন নামাজ আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করে। এরূপ নামাজির শাস্তির কথা সূরা মাউনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহপাক কোরআন পাকে বলেছেন, যে আমায় স্মরণের জন্য নামাজ পড়ে (সূরা তা’হা : ১৪)।
হযরত (সাঃ) বলেছেন, যে নামাজ মনোযোগের সাথে পড়া হয় না সেই নামাজের প্রতি আল্লাহপাক দৃষ্টিপাত করেন না। যে নামাজে মন আল্লাহর দিকে মগ্ন হয় সেই নামাজই পরকালের পাথেয়স্বরূপ হয়। সে ব্যক্তি অতি নমরতা ও ভক্তির সাথে যথানিয়মে নামাজ আদায় করে তার নামাজ আরশ পর্যন্ত উত্থিত হয়। হযরত আলী (রাঃ) দেহে তীর বিদ্ধ হলে তা নামাজের সময় বের করা হয়েছিল। তার মন নামাজে এমনভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন ছিল যে তীর খোলার সময় তিনি কোন কষ্ট অনুভব করেননি। মৃত্যু ও কবর আযাবের কথা স্মরণ করলে মন আল্লাহর দিকে মগ্ন হয়। হযরত মোস্তফা (সাঃ) বলেছেন, তৌহিদের পর আল্লাহপাক বান্দাকে নামাজ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট আর কিছু দান করেননি। যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করেছে সে ব্যক্তি ইসলামকে ধ্বংস করেছে। মুসলমান ও কাফেরদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। যে নামাজ আদায় করল সে আল্লাহর বাধ্য আর যে নামাজ আদায় করল না সে আল্লাহর অবাধ্য। নামাজের মধ্যে দাঁড়িয়ে রুকু করে অবশেষে শরীরের শ্রেষ্ঠ অঙ্গ মাথাকে মাটিতে লুটিয়ে সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণপূর্বক তার দয়া প্রার্থনা করার যে নিয়ম রয়েছে পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে এমন সুন্দর ব্যবস্থা নেই। কোন ধর্মই মানুষের সাথে আল্লাহর সরাসরি যোগাযোগ সাধনের সর্বাঙ্গীন ব্যবস্থা দিতে পারেনি। বিশ্ববিখ্যাত ইউরোপিয়ান দার্শনিক মন্তব্য করেছেন, মুসলমানগণ নামাজে তাদের দেহ ও মন নিয়োগ করে বলে তাদের প্রার্থনা খুব জোরালো হয়। নামাজি মানুষ আর বেনামাজি মানুষ কখনও সমান হবে না। তাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে থাকে।
বেনামাজির জন্য নবীর (সাঃ) সুপারিশ নসিব হবে না। বেনামাজি কখনও বেহেশতে যাবে না। কোন শক্তির কাছে নতি স্বীকার করা আল্লাহর ইচ্ছার বহির্ভূত। সে জন্যই আল্লাহর শক্তি ও দয়ার কাছে নতি স্বীকার করে নামাজ পড়া তার কাছে খুব পছন্দনীয়। সালাত বা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সরাসরি সাহায্য লাভ করা সম্ভব। এজন্য আল্লাহপাক তার প্রিয় নবীর (দঃ) মাধ্যমে জানিয়েছেন। কোন বান্দা যদি বিপদে পতিত হয় বা কোন কিছু স্রষ্টার কাছে পাওয়া বা চাওয়ার থাকে তা যেন নামাজ পড়ার পর প্রার্থনা করে (সূরা বাকারা : ৪৫)।
বিপদ-আপদ আরম্ভ হলে ধৈর্য ও খুব বিনয়ের সাথে নামাজ আদায় করে যে কোন মকসুদ বা মনোবাসনা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। কোন বিপদ উপস্থিত হলে নবী-রাসূলগণ নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। দেহ, মন ও বাক্য সংযোগে যে ইবাদত করা হয় তা শুধু নামাজের মাধ্যমে সম্ভব হয়।
কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে বা কোন বিপদে পড়লে নবী করিম (সাঃ) সাথে সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নামাজের পর দুআ করতেন। সাথে সাথে আল্লাহপাকের গায়েবি সাহায্য পেতেন। নামাজ শারীরিক সুস্থতা আনায় সহায়ক এবং নামাজের মাধ্যমে রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কোরআনে সূরা মুমিনুনে আছে, আল্লাহপাক বলেছেন, ঈমানদার নিজের নামাজকে খুব মনোযোগ সহকারে আদায় করেছে। নিশ্চয়ই তারা মুক্তির অধিকারী হয়েছে। হযরত নবী (দঃ) বলেছেন, তুমি আল্লাহর এবাদত এভাবে করো যেন তুমি তাকে দেখছ আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে ধারণা রেখ যে তিনি তোমাকে দেখছেন। হযরত মোজাদ্দেদ (রহঃ) বলেছেন, নামাজের মধ্যে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মোস্তাহাবগুলো সঠিকভাবে মনোযোগ সহকারে আদায় করাকে হুজুরি কালব বলে। এটি ছাড়া হাকিকতের সালাতের ফয়েজ লাভ হতে পারে না।
হযরত আয়শা (রাঃ) বলেছেন, হযরত নবী (সাঃ) আমাদের সাথে খুব বিনয় সহকারে কথা বলতেন, আমরাও তার সাথে কথা বলতাম, কিন্তু নামাজের সময় তিনি যেন আমাদের চিনতেন না এবং আমরাও তাকে চিনতাম না। তিনি আল্লাহর ইবাদতে এমনভাবে মগ্ন হতেন যে নামাজ মানুষের শুধু শরীর চালনা দ্বারা আদায় করা হয় কিন্তু অন্তর তার সাথে থাকে না আল্লাহপাক ওই নামাজের দিকে দৃষ্টিপাত করেন না।
হযরত আলী (রাঃ) নামাজের সময় কম্পিত হতেন এবং তার চেহারা মোবারক আল্লাহর ভয়ে বিবর্ণ হতো। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করতেন, হে আমিরুল মোমেনীন, আপনার কি হয়েছে, উত্তরে তিনি বলতেন, এখন ওই আমানত আদায় করার সময় উপস্থিত হয়েছে যা আল্লাহপাক আসমান, জমিন ও পাহাড়ের ওপর পেশ করেছিলেন কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছিল এবং ভীত হয়েছিল।
যদি অতিরিক্ত দুনিয়াদারী চিন্তা মনে উদয় হতে থাকে এবং সহজে তা দূর করা সম্ভব না হয় তবে সজোরে দৃঢ়ভাবে তা দূর করার চেষ্টা করবে। একবার ওই চিন্তা প্রবল বেগে তোমার অন্তরকে অস্থির করে তুলবে একবার তা দূর করতে সক্ষম হবে। এভাবে মনের সাথে জেহাদ করতে করতে তোমার নামাজ শেষ হয়ে যাবে। এবং আল্লাহর রহমতে হাকিকতের সালাতের ফয়েজ হাসিল হবে। আল্লাহপাক আমাদের দেহের মধ্যে যেসব মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করেছেন তার শুকরানাস্বরূপ আমরা নামাজ পড়ব কেননা হাশরের দিন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি প্রশ্ন করা হবে। কাজেই আমরা যে অনুভব শক্তি প্রাপ্ত হয়েছি তাতে সুখ-দুঃখ দুটি জিনিস অনুভব করতে পারি সেই জন্য ফজরের ২ রাকাত নামাজ। জিহ্বা দ্বারা মিষ্টি, টক, তিতা ও কটু এই ৪টা স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এজন্য জিহ্বার শুকারানাস্বরূপ ৪ রাকাত নামাজ জোহর। নাসিকা দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস, সুগন্ধ ও দুর্গন্ধ অনুভব করতে পারি এজন্য আসরের ৪ রাকাত নামাজ। চক্ষু দ্বারা ডান-বাম ও সামনে দেখি এজন্য মাগরিবের তিন রাকাত নামাজ। কর্ণ দ্বারা চারদিকের শব্দ শুনতে পাই এজন্য এশার ৪ রাকাত নামাজ। সুতরাং মূলকথা প্রত্যেক নামাজ প্রত্যেক অঙ্গের শুকরানাস্বরূপ।

আমাদের দেহের জন্য নামাজের উপকারীতা। ইসলাম কতটা বিজ্ঞান সম্মত!

ইসলাম ধর্মে যে পাঁচটি কাজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে নামাজ অন্যতম। এটা এমন একটি ইবাদত যা মানুষকে মহান আল্লাহপাকের কাছাকাছিই করে না, শারীরিক কল্যাণও সাধিত হয়। আমাদের প্রিয় নবী সা: বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো কারো বাড়ির পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত স্রোতধারার মতো। কোনো ব্যক্তি তাতে পাঁচবার গোসল করলে যেমন গায়ে ময়লা থাকতে পারে না, তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও মানুষকে পবিত্র করে দেয়।’ আর আল্লাহপাক পবিত্র কালামে পাকে ৮২ বার নামাজ কায়েমের কথা বলেছেন। নামাজের ফলে শুধু সওয়াব অর্জনই হয় না দৈহিকভাবেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। নামাজ উত্তম ব্যায়াম। অলসতা ও বিষণíতার যুগে নামাজই একমাত্র ব্যায়াম যা দ্বারা ইহকালীন বেশিরভাগ ব্যথার উপশম হয়। সঠিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, গর্দান, সিনা ও ফুসফুস সতেজ থাকে। এর ফলে হায়াত বৃদ্ধি পায়।
পবিত্র ধর্ম ইসলাম কতটা বৈজ্ঞানিকভাবে সমৃদ্ধ তা বোঝা যায় নামাজের সময়সূচি দ্বারা। মানুষ সারারাত শুয়ে ঘুমায়, ফলে বিভিন্ন অঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই রাখা হয়েছে তাহাজুদ্দের ও ফজরের নামাজ। অত:পর কিছুক্ষণ বিরতি নাস্তার জন্য। পরে এশরাক্ ও চাশ্তের নামাজ। কাজে কর্মে মানুষকে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে লম্বা বিরতির পরে জোহরের নামাজ রাখা হয়েছে। রাতে এশার নামাজটা বিতর ও হাল্কি নফলসহ দীর্ঘ করা হয়েছে। কারণ অনেকেই হজমের সুবিধার জন্য এশার নামাজের আগেই পানাহার সেরে ফেলেন। কাজেই আল্লাহ কত সুপরিকল্পিতভাবে নামাজের সময় বেঁধে দিয়েছেন ভাবতে অবাক লাগে।
পবিত্র ধর্ম ইসলাম প্রায় ১৫০০ বছর আগে যে পদ্ধতি উপহার দিয়েছিল আজ তা উত্তম শরীরচর্চা হিসেবে প্রমাণিত। একজন বিখ্যাত চিকিৎসক স্নায়ুর দুর্বলতা, জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা এবং অন্যান্য মাংসপেশীর ব্যাধির জন্য অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। পুরোপুরি সুস্খ হতে পারেননি। তারপর নামাজের দ্বারা ভালো হয়ে উঠেছেন। (সূত্র : প্রফেসরস্ কারেন্ট এফেয়ার্স) তিনি এক পর্যায়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ সেবন পরিত্যাগ করেছিলেন এবং নিয়মিত নামাজ আদায় দ্বারা সুস্খ হলেন। এ ঘটনা থেকে ওই চিকিৎসক শিক্ষা নিলেন এবং তার প্রত্যেক মুসলিম রোগীকে যারা, চলাফেরায় সক্ষম তাদের নামাজ পড়তে বলেন। নামাজের প্রতিটি রুকু ও সিজদা সঠিকভাবে আদায় করে তার বেশিরভাগ রোগী আরোগ্য লাভ করতে লাগল।
এরপর ডাক্তার সাহেব নামাজ দ্বারা যেসব রোগ নিরাময় হয় তার একটি তালিকা তৈরি করলেন। নামাজ দ্বারা আটটি রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সেগুলো হলো ১. মানসিক রোগ ২. স্নায়ুবিক রোগ যা বর্তমানে বেড়ে গেছে আর দেশে ভালো নিওরোলজিস্টের খুব সঙ্কট ৩. অস্খিরতা, ডিপ্রেশন ৪. মনস্তাত্ত্বিক রোগ ৫. হার্টের রোগ ৬. জোড়ায় ব্যথা ৭. ইউরিক অ্যাসিড থেকে সৃষ্ট রোগ এবং ৮. পাকস্খলী ও আলসারের রোগ। এ তালিকা তৈরি করেছেন একজন বিখ্যাত ফিজিশিয়ান, কোনো মৌলভী সাহেব নন। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নামাজ পড়লে আল্লাহ্ খুশি হবেন, আমরা জান্নাতবাসী হব, না পড়লে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে এটা ভাবলেও চিকিৎসাশাস্ত্রে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম।
সবশেষে ইউরোপের এক ব্যক্তির ভ্রমণ কাহিনীর কিছুটা বিবরণ তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন, আমি একদিন নামাজ পড়ছিলাম আর এক ইংরেজ দাঁড়িয়ে তা দেখছিল। আমার নামাজ পড়া শেষ হলে সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখন যেভাবে ব্যায়াম করলে তা নিশ্চয়ই আমার লেখা বই থেকে জেনেছ, কেননা আমি এ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের কথা লিখেছি।’ আমি বললাম, আমি তো মুসলমান। আমার ধর্ম ইসলাম আমাকে রোজ পাঁচবার এভাবে ধর্মীয় কাজের আদেশ দিয়েছে। আমি আপনার কোনো ব্যায়ামের বই পড়িনি। সেই ইংরেজ তখন অবাক হয়ে বলল, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন এ পদ্ধতিতে ব্যায়াম করবে সে কখনো দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হবে না।’ পরে ওই ইংরেজ ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নিতে লাগল। ইসলাম একটি আধুনিক জীবন ব্যবস্থা।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে রোজা

ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাই এতে স্বাস্থ্যনীতিও রয়েছে। দেহকে অযথা কষ্ট দেয়া ইসলামের বিধি নয়। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। সকল সক্ষম ঈমানদারদের উপর আল্লাহ রমযানের একমাস রোজা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাহদেরকে নিছক কষ্ট দেয়ার জন্যে এটা ফরজ করেননি। তিনি এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন,
‘‘ওয়া আনতা সুউমু খাইরুল লাকুম ইন্কুনতুম তা’লামুন’’- অর্থাৎ- ‘‘তোমরা যদি রোজা রাখ তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পার।’’ (সূরা বাকারাহ- ১৮৪)
বস্তুত এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রোজা পালনের নানাবিধ কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে উপরোক্ত আয়াতে সত্যতা প্রমাণ করেছেন। রোজার প্রায় সকল হুকুম আহকাম স্বাস্থ্যরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখেই করা হয়েছে। যেমন- শিশু ও অতিবৃদ্ধের জন্যে রোজা ফরজ নয়। সফরে ও অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় বেশি কষ্ট না পাওয়ার জন্যে সাহরীর ব্যবস্থা ইত্যাদি।
ইউরোপের ঘরে ঘরে ইদানীং রোজা করার হিড়িক পড়েছে। সবার মুখে এক কথা- শরীরটাকে ভালো রাখতে চাওতো রোজা কর। এ ধরনের চেতনা সৃষ্টির পিছনে সত্তর দশকে প্রকাশিত একটি বই বিশেষত: দায়ি। বইটি হচ্ছে প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর The Secret of Successful Fasting অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য। বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী ও কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড. লুটজানারের মতে, খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টকসিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের ভিতর জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, ‘রমযান’ শব্দটি আরবির ‘রমজ’ ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুড়িয়ে ফেলা। এভাবে ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরের রক্তচাপ, একজিমা, অন্ত্র ও পেটের পীড়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগব্যাধির জন্ম দেয়। এছাড়াও উপবাস কিড্নী ও লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে নতুন জীবনীশক্তি ও মনে সজীবতার অনুভূতি এনে দেয়।
রোজা পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত ‘Science Calls for Fasting’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, “The power and endurance of the body under fasting conditions are remarkable : After a fast properly taken the body is literally born afresh.”
অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য : সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
রোজা একই সাথে দেহে রোগ প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রোজাব্রত পালনের ফলে দেহে রোগ জীবাণুবর্ধক জীর্ণ অন্ত্রগুলো ধ্বংস হয়, ইউরিক এসিড বাধাপ্রাপ্ত হয়। দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। রোজাদারের শরীরের পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার ফলে চর্মরোগ বৃদ্ধি পায় না।
আধুনিক যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জার্মান, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ব্যবস্থাপত্রে প্রতিবিধান হিসেবে এর উল্লেখ করা হচ্ছে।
ডা. জুয়েলস এমডি বলেছেন, ‘‘যখনই একবেলা খাওয়া বন্ধ থাকে, তখনই দেহ সেই মুহূর্তটিকে রোগমুক্তির সাধনায় নিয়োজিত করে।’’
ডক্টর ডিউই বলেছেন, ‘‘রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলী হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।’’
তাই একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের বিধান দিতেন।
রমযান মাসে অন্যমাসের তুলনায় কম খাওয়া হয় এবং এই কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘজীবন লাভের জন্যে খাওয়ার প্রয়োজন বেশি নয়। কম ও পরিমিত খাওয়াই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। বছরে একমাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে। এটা অনেকটা শিল্প-কারখানায় মেশিনকে সময়মত বিশ্রাম দেয়ার মত। এতে মেশিনের আয়ুষ্কাল বাড়ে। মানবদেহের যন্ত্রপাতিরও এভাবে আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।
ডা. আলেক্স হেইগ বলেছেন, ‘‘রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ ও যুক্তিশক্তি পরিবর্ধিত হয়। প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়। এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিচ্ছা দূর করে। রোজা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশোধক। রক্তের পরিশোধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃতপক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে। যারা রুগ্ন তাদেরকেও আমি রোজা পালন করতে বলি।’’
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়াড বলেন, ‘রোজা মনস্তাত্ত্বিক ও মস্তিষ্ক রোগ নির্মূল করে দেয়। মানবদেহের আবর্তন-বিবর্তন আছে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির শরীর বারংবার বাহ্যিক চাপ গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। রোজাদার ব্যক্তি দৈহিক খিচুনী এবং মানসিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয় না।’’
প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী ুটডতটঢঢণভ সাহেব মনের প্রগাঢ়তা ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে রোজার ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রোজার অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে কি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হলো তার ওপর বুদ্ধিবৃত্তির কর্মক্ষমতা নির্ভর করে না। বরং কতিপয় বাধ্যবাধকতার উপরই তা নির্ভরশীল। একজন যত রোজা রাখে তার বুদ্ধি তত প্রখর হয়।’’
ডাঃ এ, এম গ্রিমী বলেন, ‘‘রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের উপর অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।’’
ডাঃ আর, ক্যাম ফোর্ডের মতে, ‘‘রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।’’
ডাঃ বেন কিম তাঁর ’’এর্ট্রধভথ তমর দণটর্ফদ’’ প্রবন্ধে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপবাসকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানী), শরীরের র্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহ জনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ (Šণযটধর) এবং সুগঠিত হতে পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষত খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার গায়ে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে। সাধারণত দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্ধপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দূরারোগ্য (ইর্লমধববলভণ ঢধ্রণট্রণ) সব ব্যাধির সৃষ্টি করে ডাঃ বেন কিম আরো বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন উপবাস কিভাবে দেহের সবতন্ত্রে (ওর্হ্রণব) স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জন ফারম্যান ‘‘এর্ট্রধভথ টভঢ ঋর্টধভথ তমর দণটর্ফদ’’ প্রবন্ধে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় উপবাস এবং খাবার গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে উপবাসের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় রমযানের রোজা রাখার সুফল পাওয়া যায় না মূলত খাদ্যাভ্যাস ও রুচির জন্য।
বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নূরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘রোজা মানুষের দেহে কোন ক্ষতি করে না। ইসলামে এমন কোন বিধান নেই, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাষ্ট্রিক ও আলসার এর রোগীদের রোজা নিয়ে যে ভীতি আছে তা ঠিক নয়। কারণ রোজায় এসব রোগের কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। রমযান মানুষকে সংযমী ও নিয়মবদ্ধভাবে গড়ে তুলে।
১৯৫৮ইং সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাঃ গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক ‘‘মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব’’ সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে। তাও উল্লেখযোগ্য কিছুই নহে, বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এরূপ রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (ঊধর্ণ উমর্ভরমফ) অপেক্ষা বহুদিক দিয়েই শ্রেষ্ঠ। ১৯৬০ ইং সালে তার গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। এ গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা মনে করেন রোজা দ্বারা রক্তের পটাসিয়াম কমে যায় এবং তাতে শরীরের ক্ষতি সাধন হয়, তাদের এ ধারণাও অমূলক। কারণ পটাসিয়াম কমার প্রতিক্রিয়া প্রথমে দেখা যায় হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটে নাই।
সুতরাং বুঝা গেল যে, রোজার দ্বারা রক্তের যে পটাসিয়াম কমে তা অতি সামান্য এবং স্বাভাবিক সীমারেখার মধ্যে। তবে রোজা দ্বারা কোন কোন মানুষ কিছুটা খিট খিটে মেজাজী হয়। এর কারণ সামান্য রক্ত শর্করা কমে যায় যা স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ক্ষতিকর নয়। অন্য কোন সময় ক্ষিধে পেলেও এরূপ হয়ে থাকে।
রোজা থেকে শারীরিক ফায়দা লাভের জন্যে রোজাদারদের প্রতি ডাঃ আমীর আই, আহমদ আনকাহর কতিপয় মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো নীচে দেয়া হলোঃ
১. যদি আপনি বিত্তবান হোন তবে অধিক ভোজন ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে চলুন। রোজা রেখে সুস্থ থাকুন- এ প্রতীক গ্রহণ করুন।
২. সহায় সম্বলহীন আপন ভাইকে সাহায্য করুন।
৩. রমযান মাস সম্পদশালীদের জন্যে নিবেশ আর গরীবদের জন্য ভালো খাবার মাস মনে করুন।
৪. দিনের বেলা ক্ষুৎপিপাসার তাড়না থেকে মুক্তি পেতে হলে রাতে অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন।
৫. খাদ্য ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
৬. খাবার ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধুমাত্র দুধের উপর নির্ভর করতে পারেন।
৭. যথাসম্ভব ইফতার তাড়াতাড়ি আর সেহেরী দেরীতে খাওয়া ভালো।
৮. সেহরী খেয়ে সটান না হয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করুন। তাতে খাদ্য ঠিকমত হজম হয়।
৯. ইফতারের পর চটপটি জাতীয় এবং ঠান্ডা জিনিস অধিক পরিমাণে গ্রহণ করবেন না।
১০. সারাদিন কাজে লিপ্ত থাকুন। ক্ষুৎপিপাসা ভুলতে চেষ্টা করবেন না।
১১. রমযান মাসে নেক কাজ ও ত্যাগ তিতিক্ষার যে অভ্যাস আপনার মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, তা সবসময় চালু রাখুন।
১২. জীবনের চড়াই উৎরাই সবসময় রোজার দাবিকে সমুন্নত রাখুন।
১৩. কু-চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত থাকুন। কুচিন্তা বিষসদৃশ যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। কুচিন্তা ও কুধারণার উপশম না ওষুধে হয় না খাদ্যে।
১৪. মুসলমান নিজেদের জীবনে স্বল্পতুষ্টি, তাওয়াক্কুল শান্তি ও মনের সন্তুষ্টির মত বেশিষ্ট্যসমূহ বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে রমযানের বরকতের পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যেই সাহসের বিস্তৃতি ও মনের শান্তি এবং এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানুষের আরোগ্য লাভের গুপ্ত রহস্য।
১৫. রমযানের সিয়াম সাধনায় মুসলমান হবে স্বাস্থ্যবান এবং পুণ্য ও পবিত্র আত্মার অধিকারী।
উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ ইফতার ও সাহরীতে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ না করে মুখরোচক মশলাদার খাবার গ্রহণ করে। এতে পাকস্থলীর এসিডিটি, আলসার, বদহজম আরো বেড়ে যায়।
তিরমিজি শরীফে এসেছে রাসূল (সা.) মাগরিবের নামাজের পূর্বে কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। খেজুর না থাকলে কয়েক কোশ পানিই পান করতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেন না এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কারণ পানি হলো পবিত্রকারী।’
উপমহাদেশে ইফতারের রকমারি আয়োজন থাকলেও তাদের সারাবিশ্বের মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিৎ। সাধারণত পানি, খেজুর, মুড়ি, ফলের রস, চিড়ার পানি, (বা এ দ্বারা তৈরি খাবার), দুধ ইত্যাদি দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যেতে পারে।
রমযানে দুই খাবার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় কম থাকায় পাকস্থলী গুরুপাক খাবার দিয়ে বোঝাই না করাই উত্তম। আসল বিষয় হলো রমযানের উদ্দেশ্য পূরণে রকমারি খাবার আয়োজন রোজার সুফলকে ম্লান করে দেয়।

রোযা রাখার ব্যাপারে বিধি নিষেধ :

রোযা রাখার ব্যাপারে আমরা মাঝে মাঝে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এমন অনেক অসুস্থ্য ব্যক্তি আছেন যাদের রোযা রাখলে আরো অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাদের রোজা রাখার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
আবার ঠিক ততটা অসুস্থ্য নয় কিন্তু অসুস্থ্যতার উল্লেখ করে রাযা না রাখাও বৈধ নয়। কুরআনে রয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত অথবা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনসমূহে এই সংখ্যা পূর্ণ করে। (সূরা বাকারাহ)
রাসূল (সা.) সফররত রোজাদারদেরকে কখনো কখনো তিরস্কার করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখা দরকার, প্রয়োজনীয় ও জরুরি ক্ষেত্রে সফর হলে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। শুধুমাত্র বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষ কিছু রোগে যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। কেননা এসব এমন ধরনের অসুস্থতা যা সম্পূর্ণ আরোগ্য হয় না। ফলে রোগী রমযান ছাড়া অন্যসময় এসব রোজা পূর্ণ করতে পারে না।
ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান। সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। Šটবটঢটভ এর্ট্রধভথ টভঢ ঊধটঠর্ণণ্র বণফফর্ধল্র’ এ শিারোনামে ওয়েব সাইটে তারা এ রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
যে সব ডায়াবেটিক রোগী ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নয় অর্থাৎ মুখে ওষুধ এবং পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীর চর্চা করে থাকেন তাদের রোজা রাখতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয়ত খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া তাদের নিয়মিত গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য অস্বাভাবিক না হয়ে যায়।
যে সব রোগী শুধুমাত্র ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ এ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে রক্তের চিনির মাত্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না তাদের খুবই সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে হবে। এসব রোগীর চিনির মাত্রা খুব নিচে নেমে গিয়ে রোগী শকে (ঔহযমথফহডণবধড ওদমডপ) চলে যেতে পারে। সেজন্য শকের যে সব লক্ষণ রয়েছে সেগুলো রোগীকে খুব সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন-অনেক ঘামতে থাকা, অস্থিরতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। এসব রোগীর যেকোন সময় এধরনের সমস্যা হতে পারে বিধায় সবসময় ডায়াবেটিক রোগীর অঊ কার্ড বহন করতে হবে। নিয়মিত প্রস্রাব (খরধভণ ওলথণর) পরীক্ষা করা ও সব সময় একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এইসব রোগীকে রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয় না।
রোজা না রাখাই ভালোঃ
১. শুধুমাত্র ইনসুলিন নির্ভরশীল রোগী।
২. খুব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না (রক্তের গ্লুকোজ) এমন রোগীর (ূঅঊঊু টভঢ অঊঊু)
৩. যে সব ডায়াবেটিক রোগী অন্যকোন জটিল রোগে আক্রান্ত যেমন-বুকে ব্যথা (খর্ভ্রটঠফণ ইভথধভট) এবং অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ (খভডমর্ভরমফফণঢ ঔহযণর্রণভ্রধমভ)
৪. যাদের ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা রয়েছে যেমন-র্ণিম টডধঢম্রধ্র
৫. সন্তান সম্ভাবা ডায়াবেটিক মা।
৬. যাদের ডায়াবেটিসের সাথে ঘন ঘন ইনফেকশনের ইতিহাস রয়েছে (খরধভণ ধভতফণর্ডধমভ, Šণ্রযধরর্টমরহ র্রটর্ড ধভতটর্ডধমভ)
৭. এমন বয়স্ক রোগী যারা ডায়াবেটিসজনিত অসুস্থতা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।
৮. রমযান মাসেই যদি দুই থেকে তিনবার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা খুব কম বা বেশি হয়ে থাকে (ঔহযমথফহডণবধট টভঢ ঔহযণরথফহডণবধট)
অনেক রোগী রয়েছে যারা অধিক ওজন সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে তারাও রোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেক সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। রমযান শুধু দৈহিক অসুস্থতাই নয়, যারা অনেকদিন ধরে মানসিক অবসন্নতা বা বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত তাদের জন্যও চিকিৎসা হিসেবে কাজ করছে। এরকম একটি জরিপে দেখা গেছে রোজা রাখার কারণে যেসব রোগী তাদের কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম নিময়-শৃক্মখলার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে তাদের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করা গেছে।
কুরআনের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রোজার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে রমযানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা দান করুন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজা রাখার উপকারিতা ( The Medical benefits of Ramadan fasting – Dr.H.Kamaly )

রোজার মাধ্যমে শরীরের মধ্যস্থিত, প্রোটিন, ফ্যাট ও শর্করা জাতীয় পদার্থসমূহ স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোতে পুষ্টি বিধান হয়। এই পদ্ধতিকে “এ্যান্টো লিসিস” বলা হয়। এর ফলে শরীরে উৎপন্ন উৎসেচকগুলো বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়ে। এটি হচ্ছে শরীর বিক্রিয়ার এক স্বাভাবিক পদ্ধতি। রোজা এই পদ্ধতিকে সহজ, সাবলীল ও গতিময় করে। যার প্রমান আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগেই হিপ্লোক্র্যাটন এর লিখা থেকেই কিছুটা সবাই জানতেন । ( “খাদ্য তোমার রোগের ওষুধ ) রোজার মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশীর প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহের রস সমুহ বেশী নিঃসরণ যার ফলে নিয়মিত অভ্যাসকারীদের শারীরিক অসুখ বিশুখ ও অবকাঠামো অন্যান্যদের চাইতে অনেক ভাল থাকে, যদি ঠিক মত পালন করেন ( প্রমাণিত, মেডিক্যাল সাইন্স এন্ড ইসলাম )
The health benefits of fasting Ramadan are: Fasting promotes detoxification. As the body breaks down its fat reserves, it mobilizes and eliminates stored toxins.–Fasting gives the digestive system a much-needed rest. After fasting, both digestion and elimination are invigorated.–Fasting promotes the resolution of inflammatory processes, such as in rheumatoid arthritis.–Fasting quiets allergic reactions, including asthma and hay fever.–Fasting promotes the drying up of abnormal fluid accumulations, such as edema in the ankles and legs and swelling in the abdomen.–Fasting corrects high blood pressure without drugs. Fasting will normalize blood pressure in the vast majority of cases, the blood pressure will remain low after the fast, if the person follows a health-supporting diet and lifestyle.–Fasting makes it easy to overcome bad habits and addictions. Many people have overcome tobacco and alcohol addictions by fasting, and even drug addictions. Fasting rapidly dissipates the craving for nicotine, alcohol, caffeine and other drugs.–Fasting clears the skin and whitens the eyes. It is common to see skin eruptions clear while fasting, and the whites of the eyes never look so clear and bright as they do after fasting–. Fasting restores taste appreciation for wholesome natural foods. People say that their taste buds come alive after fasting and that food never tasted so good.–Fasting is the perfect gateway to a healthful diet and lifestyle. Going on a fast gives you the motivation and enthusiasm to make a fresh start.–Fasting initiates rapid weight loss with little or no hunger. Most people are surprised at how little desire for food they have while fasting-. And as we know, other religions have prescribed fasting as a means of getting closer to the Al-mighty God, but obviously ( just calling a spade a spade, not by virtue of being a Muslim), fasting, the Islamic way would be more medically effective, because it is more frequent-both annually(a whole 30 or 29 days of the month of Ramadan), monthly(some days in some months) and weekly(Mondays and Thursday). And it is only those who can (religiously) observe these prescribed periods of fasting that can effectively benefit from the health advantages of it as mentioned above–
কিছু প্রমাণিত বিষয় জেনে নিতে পারেন, রোজা রাখলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় – ( শর্ত একটাই- সংযমী ও ঠিক নিয়মে রোজা রাখতে পারলে আপনার নির্দিষ্ট সুফল পেতে পারেন ) অনেকের ভুল ধারনা থাকলে তাও শুধরিয়ে নিতে পারেন ( চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে )
স্লিম বডি এবং ওজন কমানোর বিশেষ সময়ঃ- যারা শরীর কে কমানোর জন্য জিম বা ভিন্ন ধরণের এক্সারসাইজ করেন তিনিদের জন্য খুভি ভাল একটি সময় এই রমজান মাস । এ সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের জমানো চর্বিগুলো ক্ষয় হতে থাকে। এইভাবেই ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে তবে সেহেরী ও ইফতার খাওয়ার সময় অবশ্যই পুস্টি কর খাবারের দিকে লক্ক রাখতে হবে । কেউ কেউ ইফতারের পর রিদম ইক্সারসাইজের কথা বললে ও আমার ব্যাক্তি গত মতে, তা না করে পবিত্র নামাজ সমুহ আদায় করে নিতে পারলে, নামাজ থেকেই ১০০% রিদম এক্সারসাইজের ফল পাওয়ার কতা বা শারীরিক অন্যান্য অবশতা চলে যাবে যার ফল দেখতে পাবেন প্রথম তিন রমজান পর ( পরীক্ষিত, সাইন্স এন্ড মেডি ইনফ ) বা স্থূলকায় ব্যাক্তিদের জন্য অতিরিক্ত আহার বিরাট একটি স্বাস্থ্য সমস্যা তাই এ সময়ে অতিরিক্ত ভোজন বিলাস থেকে দূরে থাকার সুন্দর একটি সময় বলা যায় । রোজা রাখার কারণে স্থূলকায় শরীরে জমে থাকা এসব রিজার্ভ কোলেস্টেরল শরীরের অন্যান্য জ্বালানীর কাজে ব্যয় হয়ে যায় বিধায় শরীর অনেক টা কমে যায় এবং রক্তের সার্কুলেশনের ও সুন্দর একটা দিক নেয় । ল্যাব পরীক্ষায় দেখানো হয়েছে , রোজা রাখার প্রথম দিন হতে তৃতীয় পর্যন্ত আমাদের শরীরের মাংসপেশীর গ্লাইকোজেন যকৃত গ্লাইকোজেন থেকে শক্তি থেকে পেয়ে থেকে এবং তৃতীয় / চতুর্থ দিন থেকে, আমাদের শরীরের এটি চর্বি স্টোরেজ থেকে শক্তি পেয়ে ketosis মোডে পরিবর্তন হয় এবং এভাবে ৩০ দিন পর্যন্ত চলতে থাকলে একজন ব্যাক্তির শুধু পেশীর স্থুলতা ২ পাউন্ড লস হয়, সেই হিসাবে সারা শরীরের ৩০ দিনে ৭/ পাউন্ড পর্যন্ত শরীরের স্থলতা কমানো সম্বভ ( অবশ্য ইফতার এবং সেহেরীর প্রোটিন খাওয়ার উপর নির্ভর করবে কম বেশী – প্রমাণিত ) রোজা রাখার অভ্যাসে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা হ্রাস করে বিধায় পরবর্তীতে ঠিক সেই ভাবে যদি জীবন যাপন করতে পারেন- তা হলে অন্য এক সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে, আপনার শারীরিক অবকাঠামো সাধারনের চাইতে ২০% উন্নিত রাখা সম্বভ , সেই দৃষ্টিতে রোজা বার্ধক্য রোধে ও শারীরিক সুন্দর বৃদ্ধি করতে অনেকটা সহায়ক । ( – ইনফ, মেডিসিন )
The radical change of lifestyle during Ramadan fast has shown to affect cardiometabolic risk variables in adults. In youth however, no studies are available. We aimed to evaluate the effect of Ramadan fast on Body Mass Index (BMI) and cardiometabolic profile of obese adolescents. A prospective cohort study was conducted. We measured weight, height, body composition, waist circumference, blood pressure, heart rate, glucose, insulin, total-, low-density lipoprotein (LDL)- and high-density lipoprotein (HDL)-cholesterol, triglycerides and high sensitivity C-reactive protein (hs-CRP) levels before, during the last week of Ramadan and at six weeks after Ramadan ending. Twenty-five obese adolescents were included. BMI and glucose metabolism did not change after Ramadan or at 6 week after cessation of Ramadan. At the end of Ramadan, a significant decrease in body fat percentage was observed, while significant increases in heart rate, total cholesterol, LDL-cholesterol, HDL-cholesterol and hs-CRP were found (all P < 0.05). Six weeks after Ramadan, all parameters returned to baseline levels. In this sample of 25 ethnic obese adolescents transient cardiometabolic changes were observed during Ramadan fast. Since most of these changes were reversible within six weeks, there seems no harm or benefit for obese adolescents to participate in Ramadan.
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যঃ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্য রোজা উপকারী। রোজার ফলে রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৬০% কমানো সম্বভ । (পরীক্ষিত) বা রোজা শারীরবৃত্তীয় প্রভাব, রক্ত শর্করা কমিয়ে কলেস্টেরল কমিয়ে এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ কমিয়ে দেয় অতি সহজে, রক্তে কোলেস্টেরলের স্তর হ্রাস করে .পাশাপাশি ধমনীতে দেয়ালে যে কোলেস্টারলের গাদ থাকে তা precipitating হার কমে যায় ইহা ও প্রমাণিত. এভাবে পালাক্রমে কার্ডিয়াক এবং কারডিও ভাস্কুলারের দুর্ঘটনা জনিত যে সকল অসুখের ভয় আছে তা কমিয়ে দেয় ( হার্ট এট্যাক জাতীয় ) ঠিক তদ্রুপ এবং উচ্চ রক্তচাপের বাড়াতে বাধা দেওয়ার সাথে রক্তে চর্বি ঘাটতি পিত্ত এবং choledocus জাতীয় পাথর কমাতে বিশেষ সাহায্য করে নতুন এক প্রমানে দেখানো হয়েছে । লোয়ার কলেস্টেরলের বেলায় লিপিড প্রোফাইল ইতিবাচক প্রভাব রাখে সে জন্য নিম্ন কলেস্টেরল খুভ সহজে নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় স্ট্রোকের আক্রমন থেকে ও অনেক খানি মুক্ত রাখে – The physiological effect of fasting includes lowering of blood sugar, lowering of cholesterol and lowering of the systolic blood pressure. Decrease of cholesterol level in blood. Several studies proved that cholesterol level in blood during fasting, as well as the rate of precipitating on the walls of arteries have decreased. This in turn reduces the chances of cardiac and cerebrovascular accidents, and prevents the raise of hypertension. Shortage of fats in blood helps reduce stones of gall and choledocus. Lower cholesterol ঃWe all know that weight loss is one of the possible physical outcomes of fasting during Ramadan, but there’s also a whole host of healthy changes going on behind the scenes. A team of cardiologists in the UAE found that people observing Ramadan enjoy a positive effect on their lipid profile, which means there is a reduction of cholesterol in the blood. Low cholesterol increases cardiovascular health, greatly reducing the risk of suffering from heart disease, a heart attack, or a stroke. What’s more, if you follow a healthy diet after Ramadan, this newly lowered cholesterol level should be easy to maintain.
মানসিক দুশ্চিন্তা জনিত ভিন্ন অসুখ , কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন কু রুচি সম্পন্ন বদ অভ্যাস দূর করেঃ– রোজা রাখা ও ধর্মীয় অনুশাসনের ফলে ( মহান আল্লাহতালার প্রতি বিশেষ অনুগত থাকার কারণে ) মস্থিস্কের স্ট্রেস হরমোন করটিসেল খুভ কম নিঃসরণ হয় ( প্রমাণিত ) যার কারণে যাহারা মানসিক ভাবে ভিন্ন অসুখে আক্রান্ত তিনিদের জন্য বেশ ভাল একটি সময় বলা যায় ( এবং এর রিজাল্ড রোজা রাখার ২য় সপ্তাহ থেকে পাওয়া যায় , প্রমাণিত ) প্রমান সরুপ দেখা গেছে এতে বিপাকক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ে বিধায় মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয় বা কর্মোদ্দীপনাও বেড়ে থাকে কার ও কার ও বেলায় । অন্য দিকে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে রমজানে রোজা রাখার মাধ্যমে নতুন নতুন কোষের জন্ম হযে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে খুভ সুন্দর সহায়ক । পবিত্র রোজা শরীরের জন্য চমৎকার detox বলতে পারেন এবং ধর্মীয় অনুসাশনের ফলে কু রুচি সম্পন্ন বদ অভ্যাস থাকলে তা ও দূর হয়েযায় ।
গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যাঃ- প্রায় ই দেখা যায় অনেকেই সারা বছর গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা থাকে । কিন্তু রোজা আসলেই দেখা যায় তা কমে গেছে বা তেমন সমস্যা করেনা ( যদি রোজার মাসে ইফতারে ভাঝা পোড়া বা তেলযুক্ত খাবার না খেয়ে থাকেন ) এর মুল কারন পাকস্থলীর উক্তেজিত এঞ্জাইম সমুহকে বেশ উক্তেজিত করতে পারেনা মস্তিষ্কে কিছু হরমুন কম নিঃসরণ হয় বলে, বলা যায় এক ধরণের অবস করে রাখে বা বা এ সময় কিছুটা কম হাইড্রোক্লোরাইড নিঃসরণ হয় ভিলাই থেকে, বলতে পারেন পাকস্থলীসহ পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায় ও হজম প্রক্রিয়া ও খুভ ধির গতিতে হয় । তাই রোজা রাখলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা কম থাকবে, তারপর ও পারফিউরেশন জাতীয় আলসারে আপনার চিকিৎসকের পরামর্ষ নিতে হবে । এ সময় adiponectin নামক হরমোন বৃদ্ধি পেয়ে হজম শক্তিকে সুন্দর একটা পর্যায়ে নিতে সাহায্য করে ইহা ও প্রমাণিত ।
ডায়াবেটিসঃ- বলার অপেক্ষা রাখেনা ডায়াবেটিস টাইপ ১ , রোজা রাখার মাধ্যমে অনেক টা সেরে যায় ৭০% । কারন হিসাবে দেখানো হয়েছে উপবাসের ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে আসে, সর্ত হচ্ছে চিনি জাতীয় খাবার ইফতারের পর না খাওয়া । ( কিছু কিছু ক্ষেত্রে – অনেকের আবার একেবারে কমে গিয়ে হাইপো গ্লাইসেমিয়া দেখা দিতে পারে, সে দিকে একটু নজর রাখতে হবে ) , সে জন্য – টাইপ ১ কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা রোজা রাখার পরামর্ষ দিয়েই থাকেন অনেকের ক্ষেত্রে । তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীরা ও সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে পারেন এবং নিম্নের বিষয় সমুহ একটু খেয়াল রাখলেই হবে – হাইপোগ্লাইসিমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া)- হাইপারগ্লাইসিমিয়া (রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া)।-ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস –পানিশূন্যতা এবং থ্রোম্বোসিস–মুখে ওষুধ সেবনকারী ডায়াবেটিস রোগী- ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সমুহ -মোট ডোজের ২-৩ ভাগ ইফতারির সময় এবং ১-৩ ভাগ সেহরীরর সময় খাওয়া ভাল- গ্লিটাজোন-স্বাভাবিক মাত্রা- সালফোনাইল-ইউরিয়া-সতর্কতার সাথে দেয়া যেতে পারে। হাইপোগ্লাইসিমিয়ার ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ যারা ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস রোগী, তাদের রোজা রাখা কিছু টা ঝুকিপূর্ণ বিধায় খুভ বেশী সতর্ক থাকতেই হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্যঃ রোজার সময় যেহেতু দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকতে হয়, তাই কারো কারো পানি স্বল্পতা হতে পারে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য সমস্যার ব্যাপার। তারা ইফতার ও সেহরিতে প্রচুর পরিমাণ পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, সরবত, শাকসবজি, সালাদ, ইসবগুলের ভুসি খেলে আরাম করে রোজা রাখতে সমস্যা হবে না। গরু বা খাসির গোশত, ইলিশ ও চিংড়ি মাছ এবং যেসব খাবার খেলে মল শক্ত হয়ে যায় তা না খাওয়াই ভাল তবে এ ধরণের অসুখ যাদের আছে তাহারা অবশ্যই আঁশ জাতীয় সবজি প্রতিদিন খেতে পারলে রোজার পরে মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তাও দূর হয়ে যাবে ।

আর ও অন্যান্য অসুখে কিছুটা উপকারি যেমনঃ-

লিভার ও কিডনির ক্ষেত্রেঃ- রোজা ধারী ব্যাক্তির দেহের টক্সিন অতি সহজে বাহির হয়ে যায় – আমরা সাধারণত যে খাবারগুলো খাই, তার অধিকাংশই প্রসেসড খাবার। যেমন, রুটির চেয়ে পাউরুটি-বিস্কুট, কেক বা পিজা-র মতো খাবার আমাদের প্রিয় বেশি। এসব খাওয়ার পর দেহের ভেতর এগুলো টক্সিনে রূপান্তরিত হয়। এমনকি কোনো কোনো সময় তা এডভান্সড গ্লাইসেশন এন্ড প্রোডাক্ট (Advanced Glycation End product বা AGE) এ রূপান্তরিত হয । AGE এবং ডায়াবেটিসের কারণে মানুষের যে দুরারোগ্য ব্যাধিগুলো হয়, যেমন, অ্যাজমা, আথ্রারাইটিস, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিওর, দৃষ্টিশক্তি হারানো, দাঁত পড়ে যাওয়া, মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যাওয়া – ইত্যাদির পেছনে মূল কারন হলো AGE । রোজাতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে এই ফ্যাট কমে এবং ক্ষতিকারক টক্সিনগুলো লিভার, কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গের মধ্য দিয়ে রেচনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। ফলে ঐ জাতীয় অসুখ অন্য সময়ের চাইতে কম থাকবেই । ( প্রমাণিত )
মাথা ব্যাথাঃ- রোজার সময় বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। যেমন-পানিস্বল্পতা,ক্ষুধা , কম বিশ্রাম, চা-কফি না খাওয়া। এই স্ব সমাধানে ইফতারের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিৎ , বা সে জন্য প্রচুর পানি, লেবু বা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন যাদের ডি হাইড্রেশন হওয়ার সম্বাভনা থাকে তাদের অবশ্যই সেহেরীর সময় প্রয়োজনের চাইতে একটু বেশী পানি বা ফলের রস বা ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া ভাল । অথবা যাদের কিডনিতে ইউরিয়া জমা হওয়ার সম্বাভনা আছে বা সে জাতীয় পাথর হওয়ার সম্বাভনা আছে, তাহারা সেই আক্রমন থেকে মুক্ত থাকবেন ।
রমাজান মাসে রাগ গোসা কেন বাড়েঃ- আমার জানা মতে পবিত্র রমজান সম্মন্ধে নিজ ধর্ম সম্মন্ধে কিছু টা অভিজ্ঞতা থাকলে এই মাসে কারও রাগ গোসা বাড়ার কথা নয় , কেন না রোজা মানুষ কে ধৈর্য ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয় , তারপর ও মেডিক্যাল সাইন্স অনুসারে – কারও কারও নিজের অজান্তেই একটু বেশী হওয়ার কারন – রোজা রাখার ফলে প্রথম ৬ ঘন্টার মধ্যেই মস্তিস্ক এবং শরীরের মাংস পেশীতে, গ্লকুজের অভাবে এড্রিনালিন এবং নারাড্রিনালিন ( adrenaline and noradrenaline ) কিছু টা অনিয়ন্ত্রিত অতিরিক্ত বেড়ে যায় বা কমে যায় , তড়িৎ গতিতে এবং গ্লকজের সাময়িক ভারসাম্মতা ঠিক মত মস্তিষ্কে পৌছাইতে পারেনা এর জন্য মানুষের উপবাস জনিত রাগ বাড়ে । তখন যদি উক্ত ব্যাক্তি ( ৩০/৫০ মিনিট ) , সামান্য কিছু সময় উক্তেজিত বিষয় এড়িয়ে যেতে পারলে তাহলে এমনিতেই ধমে যায় । অন্য এক ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে, এ ধরণের আচরণ ভুক্ত মানুষের প্রথম ৩ দিন যে পরিমাণে হরমোন সমুহের স্রোত দেখা যায় পরবর্তীতে ধিরে ধিরে তা চলে যায় এমন কি রমজানের শেষে একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায় ( যদি অভ্যাস ও পরিবেষগত কোন ত্রুটি না থাকে – সাইন্স এন্ড টেক ) Anger is a natural response to perceived threats. It causes your body to release adrenaline, your muscles to tighten, and your heart rate and blood pressure to increase. Your senses might feel more acute and your face and hands flushed. অর্থাৎ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স অনুসারে দেখা যায় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারা ব্যাক্তিদের রমজান মাসে রাগ গোস্বা বেশী বাড়ে ।
ভাজা-পোড়া খাবার কেন পরিত্যাগ করবেন ইফতার বা সেহরির সময়ঃ- রোজা পালনের পর ভাজা-পোড়া খাবার পরিবেশন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তেল হচ্ছে এক ধরনের স্নেহজাতীয় পদার্থ। এটি উচ্চ তাপমাত্রায় বারে বারে গরম বা ভাজার ফলে Acrolene নামে এক ধরনের জৈব হাইড্রোকার্বন তৈরি করে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বা ইহা ধীরে ধীরে মানুষের হজমশক্তি নষ্ট করে ফেলে। ফলে পেটে বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়রিয়া, পাকস্থলী জ্বালা-পোড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। সুতরাং খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি। তার চাইতে ইফতারের সময় খেজুর, পানি, হালকা ও শরবত জাতীয় খাদ্য খাওয়া ভালো।
(রোজা প্রত্যেক ধর্মের মানুষ ভিন্ন ভাবে করে আসছেন হেপুক্রেটিস সময়ের আগ থেকেই- খুভ সঙ্কেপে জেনে নিন ) মানব সভ্যতা শরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সভ্যতা-সংস্কৃতির মানুষও রোজা পালন করতেন। পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মেই উপবাসব্রত উদযাপন বা রোজা পালনের বিধান রয়েছে যদি ও এর নিয়ম নিতি ভিন্ন । ভারতীয় উপমহাদেশ উদ্ভূত হিন্দু ধর্মে – প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় ধর্মীয় অনুশাসন হিসেবে রোজা পালনের বিধান ছিল। যোদ্ধা জাতি গ্রিক ও রোমান সভ্যতায়, হাম্মুরাবির আইন কোড খ্যাত ব্যবিলনীয় সভ্যতায়, আসুরউবলি্লতে প্রতিষ্ঠিত এসেরীয় সভ্যতায়, জরত্থুস্থ মতবাদের পীঠস্থান পারস্য সভ্যতায় রোজার প্রচলন ছিল। মহাবীর প্রবর্তিত জৈন ধর্মেও উপবাসব্রত পালনের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া প্রাচীন স্ক্যানডিনেভিয়া অঞ্চল, প্রাচ্য অঞ্চল, চীন ও তিব্বতের সভ্য মানুষ রোজা পালন করতেন । সভ্যতার ইতিহাসে খ্যাতিমান চিকিৎসক পেরিক্লাস ও হিপোক্রাটস বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আগত রোগীদের চিকিৎসা বিধানে রোজা পালনের নির্দেশ দিতেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্মলগ্ন থেকেই রোজ বা উপবাসব্রতকে চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। পিথাগোরাস পর্যায়ক্রমে ৪০ দিন রোজ বা উপবাস পালন করতেন এবং তিনি তার ছাত্রদেরও অনুরূপ আদেশ দেন। ছাত্রদের তার ক্লাসে প্রবেশের আগে রোজা পালন করতে হতো। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ও প্লেটো ১০ দিন রোজা বা উপবাস পালন করতেন। প্লুটার্ককের রোজা বা উপবাস ছিল একদিনের। – ইহুদীরা ও একি ভাবে রোজা পালন করে থাকে — তা হলে এ থেকেই বুজা যায় রোজা রাখা পবিত্র ধর্মীয় বাধ্যতা মুলক আদেশ বাদেও – একজন মানুষের স্বাস্থ্য, সামাজিক , সুন্দর চরিত্র ও সংযমী করে তৈরি করতে ১০০% সহায়ক।

পাঞ্জাবী পাগড়ি টুপি সুন্নত নয় আরবের পোশাক?

এ বক্তব্যটি কোন নবীপ্রেমিকের কথা নয়, নবীজীর দুশমনদের কথা হতে পারে। কাফেররা কী করেছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের প্রিয় নবীজী কী করেছেন? সেটাই আমাদের আলোচ্য ও বিবেচ্য। রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ। তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়। রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা আহযাব-২৩}
পোশাকের মাঝে রাসূল সাঃ কোন নমুনা আমাদের জন্য রেখে যান নি? তিনি শুধু মক্কার কাফেরদের অনুসরণে জামা কাপড় পরিধান করে গেছেন? এমন কথা রাসূল বিদ্বেষী ছাড়া অন্য কেউ কিছুতেই বলতে পারে না।
যারা আল্লাহ ও হাশরে বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজী কথায়, নবীজীর প্রতিটি আমলে উত্তম নমুনা আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ পাক।
কিন্তু যারা আল্লাহ ও হাশরে অবিশ্বাসী তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজীর চাল-চলনে আদর্শ না থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। তারা নবীজী সাঃ এর চাল-চলন ও পোশাক পরিচ্ছদ না দেখে কাফেরদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখেই আকৃষ্ট হবে বেশি এটাই স্বাভাবিক।
কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ, আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}
সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)
একজন মুমিন মুসলমান প্রতিটি আমলে রাসূলের মাঝে আদর্শ ও নমুনা খুঁজে বেড়ায়। আর নবী বিদ্বেষীরা খুঁজবে কাফেরদের মাঝে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের মুখে নবীজী সাঃ এর পরিধান করা পোশাকে থাকা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা দেয়া আদর্শিক রূপরেখা বর্জনের জন্য স্লোগান আসতেই পারে। নবীপ্রেমিকের মুখে এমন কুফরী কথা আসতে পারে না।
রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-

যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}
সুন্নাত কাকে বলে?

সুন্নাত বলা হয়, রাসূল সাঃ এর কথা, কাজ ও চুপ থাকাকে। {আনওয়ারুল কাশিফাহ, উলুমুল হাদীস ফি জাওয়ি তাতবীকাতিল মুহাদ্দিসীন, কাওয়ায়েদুত তাহদীস ফি ফুনুনি মুসতালাহিল হাদীস, লিসানুল মুহাদ্দিসীন}
রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমলকে অনুসরণের চেষ্টা করা নবীপ্রেমিকের কাজ। নবীজী সাঃ এর আমল বর্জনের বাহানা খোঁজা নবী বিদ্বেষীদের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাঃ যাই করেছেন, যে কারণেই করেছেন, তা’ই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন দলিল ও যুক্তি ছাড়া। এ কারণেই রাসূল সাঃ এর মজাক করে বলা আবু হুরায়রা তথা বিড়ালওয়ালা নাম পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সাখার রাঃ। সাহাবী আব্দুল্লাহ নামের সাথে জোড়ে নিলেন “জুলবাদাইন” তথা দুই চাদরওয়ালা নাম। আরেকজন জোরে নিলেন জুলইয়াদাইন তথা হাতওয়ালা নাম। যুক্তি খুঁজেননি, কেন বলেছেন রাসূল সাঃ? রাসূল সাঃ বলেছেন এর চেয়ে আর বড় দলিল কি আছে একজন একনিষ্ট ভক্তের কাছে?
এ কারণেই যুক্তিহীনভাবে রাসূল সাঃ কে ভালবেসে এক সাহাবী সারা জীবন খাবারের তালিকায় কদু রাখতে চেষ্টা করেছেন যেহেতু রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর অকারণেই মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট স্থানে বসে পড়তেন, যেহেতু রাসূল সাঃ কোন কারণে সেখানে একদিন বসে ছিলেন। হযরত ওমর রাঃ বিনা কারণে ইচ্ছেকৃত মাটিতে বসে গিয়েছিলেন এক স্থানে যেহেতু একদিন রাসূল সাঃ উক্ত স্থানে হোচট খেয়েছিলেন।
এই সবই তীব্র মোহাব্বত ও হৃদয়ের টানের ব্যাপার। নবীজী সাঃ কে হৃদয়ের সবটুকু নিংড়ে ভালবাসার নিদর্শন। রাসূল সাঃ এর অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে নোংরা যুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা করা গোটা পৃথিবীর আদর্শ মানব নবীজী সাঃ এর পোশাককে মক্কার কাফেরদের অনুসরণ বলাটা নবীপ্রেমিকরা করবে না। নবীবিদ্বেষীদের বেআদবীর বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

সুন্নতে নববী

1. সুরমা লাগানোর সুন্নাত তরীকা
2. আতর ব্যবহারের সুন্নাত তরীকা
3. শরীরে তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা
4. দাঁড়িতে তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা
5. মাথায় তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা
6. তায়াম্মুমের সুন্নাত সমূহ
7. অন্যের কথাবার্তা শোনার সুন্নাত তরীকা
8. মজলিসে বসার সুন্নাত তরীকা
9. টুপি পরার সুন্নাতসমুহ
10. চিরুনি করার সুন্নাত তরীকা
11. ঘুম থেকে উঠার সুন্নাতসমুহ
12. বুগলী কবর খনন করার তরীকা।
13. সিন্দুকী কবর খনন করার তরীকা।
14. কবর খনন করার সুন্নাত তরীকা
15. কাফনের কাপড়ের সুন্নাত সমুহ
16. মসজিদে প্রবেশ করার সুন্নাত সমুহ
17. নামাজের একান্নটি সুন্নাত
18. নামাজের জন্য বের হওয়ার পর সুন্নাত সমুহ
19. সফরের সুন্নত সমুহ
20. মৃত্যুকালীন সুন্নাত সমুহ
21. বাচ্চা ভূমিষ্টের পর সুন্নাত সমূহ
22. বিবাহের সুন্নাত সমুহ
23. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যক্তিগত জীবনে কিছূ অভ্যাস
24. নখ কাটার সুন্নাত সমুহ
25. ঘুমানোর সুন্নাত সমূহ
26. পেশাব পায়খানার সুন্নাত সমূহ
27. জুতা ও কাপড় পরিধানের সুন্নাত
28. পান করার সুন্নাত সমূহ
29. খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ
30. গোসলের সুন্নাত সমূহ
31. মুনাজাতের সুন্নাত সমূহ

সুরমা লাগানোর সুন্নাত তরীকা

 রাত্রি বেলায় শয়নের পূর্বে তিনবার সুরমা লাগাবে।
 তিন পদ্ধতির যে কোন এক পদ্ধতিতে সুরমা লাগাবে।
 প্রথম পদ্ধতিঃ
প্রত্যেক চোখে পৃথক পৃথক তিন বার করে সুরমা দিতে হবে। অর্থাৎ- প্রথমে ডান চোখে তিন বার। এরপর বাম চোখে তিনবার। বাম দিক হতে একবার। আবার ডান দিক হতে একবার। এমনিভাবে বাম চোখে ডান দিক হতে একবার। অতঃপর বাম দিক হতে একবার। আবার ডান দিক হতে একবার। এটা হচ্ছে প্রথম তরীকা।
 দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ
দুই চোখে এক সংগেই সুরমা দিতে হবে যাতে প্রত্যেক চোখে গড়ে তিনবার করে দেয়া হবে। অর্থাৎ প্রথমে ডান চোখের ডান দিক হতে একবার। এরপর বাম চোখের ডান দিক হতে একবার। এমনিভাবে যথাক্রমে ডান চোখে বামদিক হতে একবার। বাম চোখে বাম দিক হতে এক বার। আবার ডান চোখে ডান দিক হতে একবার। এমনি করে গড়ে তিন বার করে সুরমা ব্যবহার করা হবে।
 তৃতীয় পদ্ধতিঃ
রাসূলে পাক সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম কখনও ডান চোখে তিন বার এবং বাম চোখে দুইবার লাগাতেন। তাই চাইলে এ পদ্ধতিতেও সুরমা লাগানো যাবে।

আতর ব্যবহারের সুন্নাত তরীকা

 সব সময় আতর ব্যবহার করা।
 বিশেষ করে দুই ঈদের দিনে এবং জুমু’আর দিনে আতর লাগানো।
 মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরিধান করানোর সময় আতর দেওয়া।
 কোন মজলিসে শরীক হওয়ার ইচ্ছা করলে আতর লাগানো।

শরীরে তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা

 শরীরে তৈল লাগাতে প্রথমতঃ ডান দিক হতে শুরম্ন করবে। কেননা রাসূলে পাক সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম সর্বদাই যে কোন কাজ করতেন ডান দিক হতে শুরম্ন করতেন।
 শরীরে তৈল লাগানোর জন্যে হস্ত্মদ্বয়ে তৈল লাগাতে হলে প্রথমে ডান হাতে লাগাবে।
 অতঃপর বাম হাতে লাগাবে।
 এমনি ভাবে পায়ে তৈল লাগাতে হলে প্রথমে ডান পায়ে লাগাবে।
 এরপর বাম পায়ে লাগাবে।
 শরীরে লাগাতে ইচ্ছা করলে শরীরের ডান দিক হতে শুরম্ন করবে। এটাই হল সুন্নাত তরীকা।
দাঁড়িতে তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা
 প্রথমে তৈল বাম হাতের তালুতে ঢালবে।
 অতপরঃ ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা ডান চোখে লাগাবে।
 এর পর বাম চোখে লাগাবে।
 এবার ঘাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত ডান দিকের দাঁড়িতে লাগাবে।
 এরপর বাকি অংশে মালিশ করবে।
মাথায় তৈল লাগানোর সুন্নাত তরীকা
 তৈল শিশি থেকে বাম হাতের তালুতে ঢালবে।
 অতঃপর ডান-বাম চোখে লাগাবে।সেখান থেকে ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা প্রথমতঃ ডান-বাম চোখের পলকে তৈল লাগাবে।
 এরপর মাথায় তৈল লাগানোর সময় প্রথমে কপালের ডান দিক হতে শুরম্ন করবে।

তায়াম্মুমের সুন্নাত সমূহ

 তায়াম্মুমের শুরম্নতে পূর্ন বিসমিলস্নাহ পড়বে।
 মাটিতে হাত রাখার সময় আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা করে রাখবে।
 মাটিতে উভয় হাত রাখার পর হস্ত্মদ্বয় সামান্য আগে পিছে নিয়ে মাটিতে ঘর্ষণ করবে।
 অতঃপর উভয় হাত ঝেড়ে নেয়া।
 তায়াম্মুমের অঙ্গসমূহ মাসেহ করার সময় ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। অর্থাৎ প্রথমতঃ সম্পূর্ণ মূখ মন্ডল, অতঃপর উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করবে।
 চেহারা ও হাত মাসেহ-এর মাঝে বিলম্ব না করা।
অন্যের কথাবার্তা শোনার সুন্নাত তরীকা
১. কারো কথা শুনতে চাইলে রাস্তার এক কিনারে দাড়িঁয়ে বা কোথাও বসে কথা শুনবে।
২. কথা শুনতে গিয়ে কারো কথা কাটা যাবে না; বরং তাকে বুঝিয়ে দিবে।
৩. ধনী-গরীব সবার কথা আগ্রহের সাথে শুনবে। যে কথা শুনে সকলে হাসে, সে কথায় নিজেও হাসবে এবং যে কথায় সবাই আশ্চর্যবোধ করে, সে কথায় নিজেও আশ্চর্যবোধ করবে।
৪. কথা বলতে গিয়ে বক্তার দিক থেকে মুখ ফিরাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই লোক মুখ না ফিরাবে।
৫. একাধিক লোকের কথা শুনতে থাকলে সকলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা শুনবে।
৬ কেউ চুপি চুপি কথা বলতে চাইলে নিজের কান তার দিকে পেতে দিবে।
৭. কেউ অপছন্দনীয় কথা বলতে চাইলে দীনের কথা দিয়ে এড়িয়ে যাবে।
৮. ভালো কাজের কথা শুনলে প্রসংশা করবে, এবং মন্দ কাজের কথা শুনলে নিন্দা করবে।

মজলিসে বসার সুন্নাত তরীকা

 ১. যখন কোন বড় মজলিসে বসবে তখন অপরের সঙ্গে মিলে মিলে বসা (মাঝে ফাঁকা রাখবে না) এবং এসব ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ তোমাদের কি হলো, আমি তোমাদের বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখছি।
২. সাহাবায়ে কিরাম রাযি. নবীর দরবারে এমন দৃঢ় ভাবে বসতেন যে মাথা পর্যন্ত নড়াচড়া করতো না, মনে হতো তাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তাই মজলিসে এমনভাবে বসবে।
৩. হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মজলিসের জায়গা প্রশস্ত হলে) বেশী চাপাচাপি করে বসতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন সর্বোত্তম মজলিস তাই যা প্রশস্ত হয়। (কেননা চাপাচাপি হলে শ্রোতাদের মন বসে না)।
৪. কোনো মজলিসে পরে তাশরীফ নিলে যেখানে যায়গা পাবে সেখানেই বসে যাবে।
৫. মজলিসের শেষে এই দু’আ পড়বে।
سُبْحاَنَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لاَّاِلَهَ الاّاَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণঃ সুবহানা-কাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিহাকা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতাস্তাগ ফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইকা।
 ৬. যখন এমন কোন ছোট মজলিস হয় যেখানে লোক সংখ্যা কম, সেখানে গোল হয়ে বসা।
 ৭. গোল হওয়া অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে মিলে মিলে বসা।
 ৮. সুন্নাত তরিকায় বসা। অর্থাৎ- আত্তাহিয়্যাতুর সূরতে বসা।
 ৯. মুজাহাদার সাথে বসা, অর্থাৎ, অনেক প্রয়োজন থাকলেও তা মিটিয়ে বয়ান শুনতে থাকা।
 ১০. অহংকার না হলে চারজানু হয়ে বসা অর্থাৎ আসন গেড়ে বসা যেতে পারে।
 ১১. কিছু রৌদে কিছু ছায়ায় এরকম অবস্থায় বসবে না। এমনটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

টুপি পরার সুন্নাতসমুহ

 টুপি কাপড়ের হওয়া।
 টুপি সাদা হওয়া সুন্নাত।
 হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এমন টুপি ব্যবহার করতেন, যা মাথার সাথে লেগে থাকতো।
তাই বর্তমানে অনেক স্থানে প্লাষ্টিকের টুপি, তালের আশের টুপি, কাগজের টুপির প্রচলন দেখা যায়, এর দ্বারা সুন্নাত আদায় হবে না।

চিরুনি করার সুন্নাত তরীকা

 ডান দিক থেকে চিরুনী করা আরম্ব করবে।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিকে সিঁথী ছাড়াই মাথার কেশ পরিপাটি করতেন, কিন্তু পরবর্তী কালে সিঁথী করা শুরু করেছিলেন।
 মাথার মাঝখানে সিঁথী করা।
 রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম প্রতি দিন চিরুনি করতেন না, বরং একদিন অন্তর অন্তর চিরুনি করতেন।
 অন্য রেওয়ায়েতে আছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন চিরুনি না করে মাঝে মাঝে চিরুনি করতেন।
প্রথমে মাথায় বা দাড়ি মুবারকে তেল ব্যবহার করা। তারপর চিরুনি ব্যবহার করা।

ঘুম থেকে উঠার সুন্নাতসমুহ

 ১. ঘুম থেকে উঠে তিন বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলে উভয় হাতের তালু দ্বারা চোখ ঢলা।
 ২. ঘুম থেকে উঠে কালিমায়ে তাইয়্যিবা পড়া।
 ৩. এই দুয়া পড়া-
اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ اَحْيَانَا بَعْدَ مَا اَمَاتَنا وَاِلَيْه الُّشُوْرُ
উচ্চারণঃ আলহামদু লীল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না-বা‘দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন্নুশুর।
 ৪. ঘুম থেকে উঠে মেসওয়াক করা।

বুগলী কবর খনন করার তরীকা

 প্রথমে দিক সোজা করে উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৪ হাত, প্রস্থে পৌনে দুই বা দুই হাত এবং আড়াই হাত গভীর করে একটি গর্ত খুঁড়বে। তারপর পশ্চিম দিকে দেয়ালের নিচ উত্তর-দক্ষিণে লম্বা করে গর্ত করবে এবং সেখানে মাইয়েতকে রাখবে।

সিন্দুকী কবর খনন করার তরীকা

 কবরকে মাইয়্যেতের দেহের দৈর্ঘের চেয়ে সামান্য পরিমান লম্বা করবে। এর চেয়ে বেশী লম্বা করা উচিত নয়। মাইয়্যেতের দেহের দৈর্ঘের অর্ধেক পরিমান চওড়া করবে। গভীরতায় দেড় হাত পরিমান খনন করার পর কবরের মধ্যে মাইয়্যেতের জন্য আর একটি ছোট গর্ত খনন করবে। এ গর্তটি দৈর্ঘ্যে মাইয়্যেতের দেহের সমপরিমান এবং প্রস্থে সোয়া হাত এবং গভীরতায় এক/দেড়হাত পরিমান হবে। এভাবেই সিন্দুকী কবর খনন করা সুন্নাত। তবে বুগলী কবর সিন্দকী কবর থেকে উত্তম।

কবর খনন করার সুন্নাত তরীকা

 কবর দুই প্রকার (১) সিন্দুকী কবর। (২) বুগলী কবর। আমাদের দেশের অধিকাংশ এলাকার মাটি সাধারণত নরম হওয়ায় বুগলী কবর দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য সিন্দুকী কবর খনন হয়।
কাফনের কাপড়ের সুন্নাত সমুহ
 পুরুষের জন্য তিনটি কাপড় সুন্নাতঃ
১. লেফাফা ২. ইযার ৩. কোর্তা।
লেফাফা ও ইযার মাথা থেকে পা পর্যন্ত এবং কোর্তা কাঁধ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত হওয়া সুন্নাত এবং কোর্তার কোনো আস্তিন থাকবে না।
 মহিলার জন্য পাঁচটি কাপড় সুন্নাতঃ
১. লেফাফা ২. ইযার ৩. র্কোতা ৪.সিনাবন্দ ৫. সারবন্দ। লেফাফা ও ইযার মাথা থেকে পা পর্যন্ত, কোর্তা কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত, সারবন্দ তিন হাত লম্বা এবং সিনাবন্দ বুক থেকে হাটু পর্যন্ত লম্বা হওয়া সুন্নাত ।

মসজিদে প্রবেশ করার সুন্নাত সমুহ

 ১. বিসমিল্লাহ পড়া ।
২. দূরূদ শরীফ পড়া।
৩. মসজিদে প্রবেশ কালে এ দু‘আ পড়া-
اَللهُمَّ افْتَحْ لِيْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক।
৪. ইতিকাফের নিয়ত করা।
৫. মসজিদের ভিতরে প্রথমে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা।

নামাজের একান্নটি সুন্নাত

দাড়ানো অবস্থায় ১১ টি সুন্নাত

 ১. (তাকবীরে তাহরিমার সময়) সোজা দাঁড়ান। অর্থাৎ মাথা নিচু না করা।
২. পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলা মুখি রাখা। অবশ্য দু পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখা মুস্তাহাব।
৩. মুকতাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পর সাথে সাথে হওয়া।
৪. (পুরুষের জন্য) তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো।
৫. তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাতের তালু কিবলার দিকে থাকা।
৬. আঙ্গুল গুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা।
৭. হাত বাধার সময় ডান হাতের আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর রাখা।
৮. ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্টা আঙ্গুলের দ্বারা বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জির জোড়া বেষ্টন করে ধরা।
৯. মাঝ খানে তিন আঙ্গুল বাহুর উপর রাখা।
১০. নাভীর নিচে হাত বাধা ।
১১. ছানা পড়া।

 ক্বিরাতের সুন্নাত ৭ টি

 ১. “আউযু বিল্লাহ” পূর্ণ পড়া।
২. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়া।
৩. সুরা ফাতেহার শেষে আমীন বলা।
৪. ফজর ও যোহর নামাযের তিলাওয়াতে “সূরা হুজরাত” হতে “সূরা বুরুজ” পর্যন্ত সূরা সমূহের মধ্য থেকে কোন একটি সূরা পড়া। এবং আছর ও ইশার নামাজে “সূরা তারেক” হতে সূরা “লাম ইয়াকুন” পর্যন্ত সূরা সমূহের যে কোন একটি সূরা পড়া। এবং মাগরিব নামাজে সূরা “যিলযাল” থেকে সূরা “নাস” পর্যন্ত সূরা সমুহের যে কোন একটি সূরা পড়া।
৫. ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়া।
৬. মধ্যম গতিতে ক্বিরাত পড়া।
৭. ফজরের নামাজের প্রথম রাকাতের ক্বেরাত দ্বিতীয় রাকাত অপেক্ষা দীর্ঘ করা।

 রুকুর সুন্নাত – ৮ টি

১. রুকুতে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
২. (পুরুষের জন্য) রুকুতে গিয়ে উভয় হাত দিয়ে হাটু মজবুত ভাবে ধরা।
৩. পুরুষের জন্য হাটু ধরার মধ্যে হাতের আঙ্গুল সমূহ ছড়িয়ে রাখা।
৪. পিঠকে সমতল ভাবে বিছিয়ে দেওয়া।
৫. রুকুর সময় পায়ের নালাগুলো সোজা রাখা।
৬. মাথা ও পাছা সমান করে রাখা।
৭. রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহি রাব্বিয়াল আজিম’ বলা।
৮.রুকু হইতে উঠিবার সময় ইমামের ইমামের জন্য উচ্ছস্বরে ‘সামিআল্লা হুলিমান হামিদা’ বলা এবং মুকতাদির আস্তে ‘রব্বানা লাকাল হামদু’ বলা। আর যিনি যিনি একা নামাজ পড়েন তার জন্য উভয় বাক্য বলা।

সিজদার সুন্নাত ১২ টি

১. সিজদায় যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
২. সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাটুদ্বয় জমিনে রাখা।
৩. অতঃপর উভয় হাত রাখা।
৪. অতঃপর নাক রাখ।
৫. অতপর কপাল রাখা।
৬. দুই হাতের মাঝখানে সিজদা করা।
৭. সিজদার সময় পেটকে রান থেকে পৃথক রাখা এবং বাহুদ্বয় হতে পাজর কে পৃথক রাখা।
৮. কনুদ্বয় জমিন থেকে পৃথক রাখা।
৯. সিজদার মধ্যে কমপক্ষে তিন বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ বলা।
১০. সিজদা হইতে উঠিবার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
১১. সিজদা হইতে উঠিবার সময় প্রথমে কপাল অতঃপর নাক তারপর উভয় হাত তারপর উভয় হাটু উঠানো।
১২. দুই সিজদার মাঝখানে ধীরস্থির ভাবে বসা।

‘আত্তাহিয়্যাতু’- এর জন্য বসার সুন্নাত ১৩ টি

 ১. ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখা এবং বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলা মুখি রাখা।
২. হাত দুটো রানের উপর রাখা।
৩. আত্তাহিয়্যাতুর মধ্যে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুলি লম্বা করে উঠানো এবং লা ইলাহা বলার সময় নিচে করে ফেলা।
৪. শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর দূরূদ শরীফ পড়া।
৫. দূরূদ শরীফের পর কোরআন ও হাদীসের সাথে সাদৃশ্য শব্দ বিশিষ্ট দুআ মাছুরা পড়া।
৬. উভয় দিকে সালাম ফিরানো।
৭. ডান দিক থেকে সালাম ফিরানো আরম্ভ করা।
৮. ছালামের মধ্যে পিছনে মুকতাদী ফেরেশতা ও নেককার জ্বিনদের নিয়ত করা।
৯. (মুকতাদীর জন্য) ইমাম, ফেরেশতা ও নেককার জিন ও ডানবামের অন্য মুকতাদীর নিয়ত করা।
১০.মুকতাদীগণ ইমামের পরক্ষনই সাথে সাথে ছালাম ফিরান।
১১. দ্বিতীয় ছালামের আওয়াজকে প্রথম ছালামের তুলনায় ছোট করা।
১২. মাসবুকের জন্য ইমাম ফারেগ হওয়ার উপেক্ষা করা। (অর্থাৎ ইমাম দ্বিতীয় ছালামের থেকে ফারেগ হওয়ার পর মাসবুক উঠে দাড়াবে এর আগে নয়।
বিশেষ ফায়দাঃ রুকুতে হাতের আঙ্গুলগুলো ছড়ানো ছিল। কিন্তু সেজদাতে সেগুলো মিলিত থাকবে। আর অন্যান্য অবস্থায় তা স্বাভাবিক থাকবে।

নামাজের জন্য বের হওয়ার পর সুন্নাত সমুহ

 ১.ঘর হতে বের হওয়ার পর এই দোয়া পড়বে-
بِسْمِ اللهِ تَوَكّلْتُ عَلى اللهِ، لاَ حَوْلَ وَلاَقُوّةَ اِلاَّ بِاللهِ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওলা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’’।
 ২. নফল ও সুন্নাত নামাজ নামাজ ঘরে পড়া সুন্নাত।
 ৩. ঘর হতে বের হওয়ার সময় নামাজের নিয়ত করা।
 ৪. নামাজ আদায়ের জন্য খুবই তাজীমের সাথে ছোট ছোট কদমে চলা। যেহেতু প্রত্যেক পদচি‎হ্ন আমল নামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে এবং প্রতিটি কদমের বিনিময়ে সওয়াব পাওয়া যায়।
 ৫. মসজীদে বা অন্য কোন জায়গা থেকে বাড়ী আসলে প্রথমে নিন্মাক্ত দোয়া পড়ে বাড়ীর সকল লোকদের কে সালাম করা।
اَللهُمَّ اِنّيْ اَسْاَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَ خَيْرَ المَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَ بِسْمِ اللهِ لَجْنَا وخَرَجْنا وَعَلى ربِّنَا تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খরাজনা ওয়া আলাল্লøাহি রব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
সফরের সুন্নত সমুহ
 ১. একা একা সফর করবেনা। কমপক্ষে দুই জন মিলে সফর করবে।
 ২. গাড়ি-ঘোড়া বা যে কোন যানবাহনে আরোহনের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে আরোহন করবে।
 ৩. যানবাহনে ঠিকমতো বসার পর তিন বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এ দুয়া পড়বে।
سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هذَا وَمَا كُنَّا لَه مُقْرِنِيْنَ وَ اِنَّا اِلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ
উচ্চারণঃ ছুবহানাল্লাজী ছাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনীন,ওয়া ইন্না ইলারাব্বিনা লামুনকালিবুন।
 ৪. সফর অবস্থায় সাওয়ারী যখন উপরের দিকে উঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন নিচের দিকে নামে তখন ‘ছুবহানাল্লাহ’ পড়বে।
 ৫. যখন গন্তÍব্য স্থানে পৌঁছবে তখন তিন বার এ দুয়া পাঠ করবে-
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْه
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীহা।
 ৬. সফরের জরুরত শেষ হলে পুনরায় তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসবে, অযথা দেরি করা ঠিক নয়।
 ৭. সফর কালিন সময় সাথে কুকুর রাখা নিষেধ।
 ৮. সফর থেকে ফিরে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করবে।
 ৯.সফর থেকে ফিরে এসে এ দু‘আ পাঠ করবে।
آئِبُون تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
উচ্চারণঃ আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা লিরাব্বিনা হামিদুন।

সামাজিক ও পারিবারিক জীবন যাপনের সুন্নত

 ১. দেখা সাক্ষাতে পরস্পর বেশী বেশী সালাম দেওয়া।
 ২. সালামের পর মুসাফাহা মু‘য়ানাকা করা। মহিলারা মহিলাদের সাথে পরস্পর মুসাফাহা করতে পারবে ।
 ৩. কোন মজলিসে উপস্থিত হলে যে কোন খালি যায়গায় বসে যাবে। কাউকে বসা থেকে তুলে নিয়ে বসবে না ।
 ৪. কোন মজলিসে দুয়ের অধিক মানুষ থাকলে দুই জন মিলে কানে কানে চুপে-চুপে কথা বলবে না।
 ৫. কারও ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে।
 ৬. সমাজের সবার সাথে ভাইয়ের মত আচরণ করবে।

মৃত্যুকালীন সুন্নাত সমুহ

 ১.নিজের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়েছে বলে মনে হলে এই দোয়া বেশি বেশি করে পড়বে-
اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاَلْحَقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الْاَعْلى
উচ্চারণঃ আল্লাহম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া আলহীকনী বিররাফীকিল আ’লা।
 ২. মৃত্যু শয্যায় শায়ীত ব্যক্তির চেহারা কেবলামুখী করে দিবে এবং তার সামনে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বেশি বেশি কালিমা শরীফ পড়তে থাকবে। তবে কালিমা পড়ার হুকুম করবে না এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে।
 ৩. রূহ বের হওয়ার কোন নিদর্শন অনুভব হলে এ দু‘আ পড়তে থাকবে।
اَللّهُمَّ اَعِنِّيْ عَلى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَسَكَرَاتِ الْمَوْتِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আঈন্নী আলা গামারাতিল মাউতি ওয়া ছাকারাতিল মাউত।
 ৪.মৃত্যু হয়ে গেলে উপস্থিত লোকেরা এ দু‘আ পড়বে-
اِنَّا للهِ وَاِنَّا اِلَيْه رَاجِعُوْن، اَللّهُمَّ اَجِرْنِيْ فِيْ مُصِيْبَتِي وَاخْلُفْ لِيْ خَيْرًا مِنْهَا
উচ্চারণঃ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুছিবাতি ওয়াখলুফলী খাইরাম মিনহা।
 ৫. রূহ বের হওয়ার পর মৃত ব্যক্তির চোখ ও মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দিবে। প্রয়োজনে মাথার উপর ও থুতনীর নিচ দিয়ে কাপড় বেঁধে দিবে।
 ৬. মৃত্যু ব্যক্তিকে খাটে রাখর সময় এবং লাশবাহী খাট কাঁধে উঠানোর সময় “বিসমিল্লাহ” বলবে।
 ৭. মৃত্যু ব্যক্তিকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে জানাযা সম্পন্ন করে নিকটস্থ কোন গোরস্থানে দাফন করে দিবে। বিনা প্রয়োজনে দাফনের জন্য দূরের গোরস্থানে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে নেওয়া মাকরূহ।
 ৮. মাইয়্যেতকে কবরে ডান কাত করে রাখার সময় এদু‘আ পড়বে-
بِسْمِ اللهِ وَعَلى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
উচ্চারণঃ বিছমিল্লাহি ওয়ালা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
 ৯.মাইয়্যেতকে কবরে ডান কাত করে এমনভাবে শোয়াবে যে পুরা সিনা কেবলার দিকে ফিরে থাকবে। বর্তমানে আমাদের দেশে মাইয়্যেতকে চিত করে শুইয়ে চেহারা কেবলার দিকে করে দেওয়া হয় তা সুন্নাতের খেলাফ।
 ১০.জানাযার পর দাফনের পূর্বে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা নিষেধ। তাই এ সময় দু’আ করবে না। বরং মাইয়্যেতকে কবরে দাফন করার পর মুনাজাত করবে।
 ১১. দাফন করার পর মাগফিরাত কামনা করে দু‘আ করবে বিশেষতঃ “মুনকার-নাকীরের” প্রশ্নের জবাব যেন দৃঢ়তার সাথে দিতে পারে তার জন্য দু‘আ করবে।
 ১২. কবর খুব বেশি উচু করবে না এবং পাকা করবে না।
 ১৩. কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে।
 ১৪. প্রতিবেশিরা মাইয়্যেতের পরিবার পরিজনদের খাবার দিবে।
 ১৫. জানাযার পর মাইয়্যেতের চেহারা দেখানো নিষেধ।

বাচ্চা ভূমিষ্টের পর সুন্নাত সমূহ

 ১. বাচ্চা ভূমিষ্টের পর ডান কানে আযান আর বাম কানে ইকামত শুনিয়ে দিবে।
 ২.সাত দিনের সময় সুন্দর একটি ইসলামী নাম রাখবে।
 ৩.সপ্তমদিন আকীকা করবে আর যদি সপ্তম তিন আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে চৌদ্দতম দিন আকিকা করবে, তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিন আকিকা করবে। তাও সম্ভব না হলে জন্মের সপ্তম দিন খেয়াল রেখে আকীকা করবে। অর্থাৎ- যেই বারে জন্ম গ্রহণ করেছে তার আগের দিন আকীকা করবে।
 ৪. মাথা মুন্ডানোর পর মাথায় জাফরান লাগিয়ে দিবে।
 ৫. ছেলের আকীকার জন্য দুইটি বকরী, আর মেয়ের আকিকার জন্য একটি বকরী জবেহ করা উত্তম।
 ৬. বাচ্চার মাথা মুন্ডিয়ে চুল পরিমান রূপা সদকা করবে।
 ৭. আকীকার গোশত কাঁচা অথবা রান্না করে দিতে পারবে।
 ৮. আকীকার গোশত দাদা, দাদি, নানা, নানি, সকলে খেতে পারবে।
 ৯. কোন বুযূর্গের মুখে খেজুর চিবিয়ে বাচ্চার মুখে দেয়া এবং দোআ করানো।
 ১০. সাত বছর বয়সে নামায পড়ার নির্দেশ করবে এবং দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়াবলি শিখাবে।
 ১১. দশ বছর বয়সে নামাযের জন্য শাসন করবে।

বিবাহের সুন্নাত সমুহ

 ১. নেককার পাত্র পাত্রি তালাশ করা এবং প্রস্তাব পাঠানোর মাধ্যমে বিবাহ করা।
 ২. জুমআর দিন মসজিদের মধ্যে শাওয়াল মাসে বিবাহ করা।
 ৩. সাধা-সিধে অনাড়ম্বরভাবে কোলাহল মুক্ত বিবাহ করা।
 ৪. সামর্থের ভিতরে মহর নির্ধারণ করা।
 ৫. বিবাহের প্রথম রাতে স্ত্রীর চুলের অগ্রভাগে ধরে এ দু‘আ পড়বে-
اَلّهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ خَيْرَها وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْه وأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْه
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আছআলুকা খাইরাহা ওয়াখাইরামা জাবালতাহা আলাইহি ওয়াআউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়াশাররিমা জাবালতাহা আলাইহি।
 ৬. ওয়ালিমা খাওয়ানো অর্থাৎ বাসর রাতের পরদিন বন্ধু বান্ধব আত্মীয়-স্বজন গরীব-মিসকিনদের সামার্থনুযায়ী মেহমানদারী করা।
 ৭. বর ও কনের জন্য এ বলে দুআ করবেঃ-
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَ جَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْر
বারাকাল্লাহু লাকা ওয়াবারাকা আ‘লাইকা ওয়াজামা‘আ বাইনাকুমা ফী খাইর।
 ৮. বিবাহের খবর ব্যাপক প্রচার প্রসার করা, এবং বিবাহের পর উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যক্তিগত জীবনে কিছূ অভ্যাস

 ১. রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাটতেন মানুষদেরকে সামনে থেকে সরিয়ে দিতেন না।
 ২.কোন জামাতের সাথে চলতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছনে পিছনে চলতেন।
 ৩. চলার পথে নিচের দিকে নজর রাখতেন।
 ৪. সামনের দিক থেকে কেউ আসলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগে সালাম দিতেন।
 ৫. চলার সময় সামনের দিকে একটু ঝুকে বিনয়ের সাথে চলতেন । মনে হয় যেন উঁচু জায়গা থেকে নিচে নামতেছেন।
 ৬. কারো সাথে শক্ত ভাষায় কথা বার্তা বলতেন না। নরম মেজাজে কথা বার্তা বলতেন।
 ৭. সকলের সাথে মিলে মিশে থাকতেন। কখনো কখনো রহস্যকর কথা বার্তা বলতেন।
৮. গরীব-অসহায় ও বৃদ্ধ লোকদের কথা গুরত্বসহকারে শুনতেন। কখনো কখনো তাদের কথা বার্তা শুনার জন্য রাস্থার পাশে বসে থাকতেন।
 ৯. যে কোন সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে খুব সম্মান করতেন।
 ১০. নিজের পুরা সময়ের কিছু সময় আল্লাহর ইবাদতে আর কিছু সময় পরিবার পরিজনদের দেখা শুনার কাজে ব্যয় করতেন।
 ১১. প্রতিবেশিদের সাথে সূ-সম্পর্ক রাখতেন। বড়দেরকে সম্মান করতেন। আর ছোটদেরকে স্নেহ করতেন
 ১২.কোন আত্মীয়-স্বজন খারাপ আচরণ করলে রাসূল (সাঃ) তার সাথে উত্তম আচরণ করতেন।
 ১৩. দূর্বল ও নিম্ন শ্রেণীর লোকদের প্রতি খুব খেয়াল রাখতেন।
 ১৪. মুসলমান ভাইদের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করতেন।
 ১৫. দিনের সময় কে তিন ভাগে ভাগ করে নিতেন। এক ভাগ, আল্লাহর ইবাদত ও দ্বীনের কাজের জন্য। দ্বীতিয় ভাগ, পরিবার পরিজনদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। তৃতীয় ভাগ, নিজের ব্যক্তিগত কাজ ও শারিরিক সুস্থতার জন্য ব্যয় করতেন।
 ১৬. বগল ও নাভীর নিচের পশম ইত্যাদি নিয়মিত পরিস্কার করে রাখতেন। এগুলো পরিস্কার না করা অবস্থায় চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গলে গুনাহগার হতে হবে।

নখ কাটার সুন্নাত সমুহ

 ১. প্রতি সপ্তাহে একবার নখ কাটা সুন্নাত।
 ২. শুক্রবার জুম‘আর নামাযের আগে নখ কাটা সুন্নাত।
 ৩. উভয় হাতকে মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর নখ কাটা শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীর কেটে শেষ করবে। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ কাটবে।
 ৪. ডান পায়ের কনিষ্ট আঙ্গুলী থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠ আঙ্গুলীর নখ কেটে শেষ করবে।

ঘুমানোর সুন্নাত সমূহ

 ১. ঘুমনোর পুর্বে ওজু করা।
 ২. ইশার নামায পড়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া। যাতেকরে তাহাজ্জুদের সময় জাগ্রত হতে সহজ হয়।
 ৩. ঘুমানোর আগে বিসমিল্লাহ পড়ে নিম্নোক্ত কাজ সমূহ করা। দরজা বন্ধ করা। বাতি নিভানো। পানির মশক বা খাদ্য দ্রব্যের অন্যান্য পাত্রসমূহ ঢেকে রাখা। ঢাকার কোন বস্তু না থাকলে বিসসিল্লাহ পড়ে পাত্রের মুখে একটি লাঠি দিয়ে রাখা।
 ৪. ঘুমানোর পুর্বে বিছানা ভাল ভাবে ঝেড়ে নিবে।
 ৫. উপুড় হয়ে ঘুমাবে না কেননা এভাবে শয়তান শয়ন করে থাকে।
 ৬. ডান কাত হয়ে কিবলামুখী হয়ে ডান হাত গালের নিচে রেখে ঘুমাবে।
 ৭. ঘুমানোর পূর্বে কয়েকবার দূরূদ শরীফ পাঠ করবে এবং তাসবীহ ফাতেমী। অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লা, ৩৩ বার আলহামদুুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।
 ৮. ঘুমানোর পূর্বে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে ঘুমানোর কাপড় পরিধান করবে।
 ৯. ঘুমানোর পূর্বে তিনবার এসতেগফার, ঘুমানোর দোয়া ও কালেমায়ে তাইয়্যেবা পাঠ করবে।
 ১০. দুপুরের খাবারের পর সময় থাকলে কিছুক্ষন শয়ন করবে। ঘুম আসুক বা না আসুক।
 ১১. ঘুমানোর পুর্বে সুরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়া সুন্নাত।
 ১২. ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো সুন্নত।
 ১৩. দুঃস্বপ্ন দেখলে তিনবার ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানীর রাজীম’ পড়ে বাম দিকে থুথু ফেলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়ে নিম্নের দুয়াটি পড়বে।
اَللهُمَّ اِنّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هذِه الرُّؤْيَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররী হাজিহীর রুঈয়া।
 ১৪. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়ার পর ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দুয়াটি পড়বে।
 ১৫. ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করা সুন্নাত।
 ১৬. ঘুম হতে জাগ্রত হওয়ার পর পরই উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল এবং চক্ষুদ্বয়কে হালকা ভাবে মর্দন করবে যাতে ঘুমের তন্দ্রা দূর হয়ে যায়।

পেশাব পায়খানার সুন্নাত সমূহ

 ১. বাথরুমে যাওয়ার সময় এই দু‘আ পড়বে।
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।
 ২. বাথরুমে সর্ব প্রথম বাম পা ঢুকাবে।
 ৩. বাথরুমে জুতা বা সেন্ডেল পরিধান করবে।
 ৪. মাথা ঢেকে বাথরুমে প্রবেশ করবে।
 ৫. পেশাব পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা না থাকলে খোলা মেলা কোন জায়গায় বসলে এমনভাবে বসতে হবে যেন কারও নজরে সতর না দেখা যায়।
 ৬. পেশাব পায়খানা দাঁড়িয়ে না করে বসে করা।
 ৭. পানি ব্যবহার করার আগে ঢিলা কুলুখ বা টিসু পেপার ব্যবহার করা।
 ৮. বসার নিকটতম হয়ে সতর খুলবে এবং কিবলার দিকে মুখ ও পিঠ দিয়ে বসবে না।
 ৯. পেশাব ও নাপাক পানির ছিঁটা থেকে বেঁচে থাকবে।
 ১০. ঢিলা খুলুখ ও পানি বাম হাত দ্বারা ব্যবহার করবে।
 ১১. ঢিলা খুলুখ ব্যবহার করার পর পানি ব্যবহার করবে।
 ১২. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সামান্য চলা ফেরা করবে।
 ১৩. পেশাব নরম স্থান বা এমন জায়গায় করবে যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা উপরে উঠে শরীর নাপাক হবে না।
 ১৪. বের হয়ে এ দু‘আ পড়বে।
উচ্চারণঃ গোফরানাকা আলহামদুলিল্লাহীল্লাজী আজহাবা আন্নীল আযা ওয়া আ ফানী।
 ১৫. ইস্তিঞ্জা থেকে ডান পা দিয়ে বের হবে।
 ১৬. ইস্তিঞ্জায় প্রবেশের আগে কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম রাসূল সা. এর নাম লেখা আংটি খুলে প্রবেশ করবে।
 ১৭. বসে বসে পেশাব করবে।

জুতা ও কাপড় পরিধানের সুন্নাত

 ১. দু‘আ পড়ে কাপড় পরিধান করা।
 ২. যে কোন ধরনের কাপড় পরিধানের সময় সর্ব প্রথম ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করাবে।
 ৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদা কাপড় বেশি পছন্দ করতেন।
 ৪. পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম।
 ৫. কাপড় খোলার সময় “বিসমিল্লাহ” বলা এবং খোলার সময় বাম হাত ও বাম পা আগে বের করা।
 ৬. জুতা প্রথমে ডান পায়ে পরিধান করবে তারপর বাম পায়ে পরিধান করবে।
 ৭. জুতা খোলার সময় প্রথমে বাম পা খুলবে তারপর ডান পা খুলবে।
 ৮. নতুন কাপড় পরিধান করার দু‘আ পড়বে।
পান করার সুন্নাত সমূহ
 ১. পানি পান করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পান করা। আর শেষ করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা।
 ২. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পানি পান করবে এবং প্রতিবার শ্বাস ছাড়ার সময় পান পাত্র থেকে মুখ সরিয়ে নিবে।
 ৩. পান পাত্রের ভাঙ্গা দিক দিয়ে পান করবে না।
 ৪. পানি দাঁড়িয়ে পান করবে না বরং বসে পান করবে।
 ৫. ওজু করার পর পান পাত্রের অতিরিক্ত পানি কেবলামুখী হয়ে পান করবে। এতে বিভিন্ন রোগ হতে আরোগ্য লাভ করবে।
 ৬. যিনি পান করাবেন তিনি সর্বশেষ পান করবেন।
 ৭. পানীয় জিনিস নিজে পান করে অন্যকে দিতে হলে সর্বপ্রথম ডান দিক থেকে দেয়া। তারপর ধারাবাহিকভাবে সবাইকে পান করনো।

খানা খাওয়ার সুন্নাত সমূহ

 ১. খানা খাওয়ার পূর্বে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
 ২. দস্তুরখানের উপর খানা খাওয়া।
 ৩. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
 ৪. খানা ডান হাত দিয়ে খাওয়া।
 ৫. বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বুযূর্গ তার দ্বারা খানা শুরু করানো।
 ৬. খাদ্যের ভুল ত্রুটি খোঁজ না করা।
 ৭. খাবার শেষে হাতের আঙ্গুল সমূহ চেটে খাওয়া। এবং খাবারের পাত্রগুলো আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে খাওয়া।
 ৮. এক ধরনের খাবার হলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া।
 ৯.খানার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র “বিসমিল্লাহি আওয়্যালাহু ওয়া আখীরাহ” পড়া।
 ১০. প্লেট থেকে কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিস্কার করে খাবে।
 ১১. জুতা খুলে খানা খাওয়া।
 ১২. খানা খাওয়ার সময় হেলান দিয়ে না বসা।
 ১৩. তিনভাবে খানার সময় বসা যায়। ক. পদযুগলে ভর করে উভয় হাঁটু উঠিয়ে। খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাৎ নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা।
 ১৪. খানা সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। তাই খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পর ভালো ভালো কথা বার্তা বলবে। তবে অহেতুক কথা দুঃশ্চিন্তাযুক্ত কথা এবং ঘৃণিত কথা বার্তা বলবে না।
 ১৫. খানা খাওয়ার পর উভয় হাত ভালভাবে ধৌত করবে।
 ১৬. খানার পর কুলি করে মুখ পরিস্কার করবে।
 ১৭. খানার শেষে দু‘‘আ পড়া এবং আগে দস্তরখানা উঠিয়ে পরে নিজে উঠা।

গোসলের সুন্নাত সমূহ

 ১. ফরজ গোসলের আগে পেশাব করে নিবে।
 ২. ওজুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়বে।
 ৩. কাপড় বা শরীরের কোন স্থানে নাপাক ময়লা লেগে থাকলে তিনবার ধুয়ে তা পরিস্কার করবে।
 ৪. নাপাক লাগা থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায় লজ্জাস্থান ধৌত করা। অতঃপর উভয় হাত ধৌত করা।
 ৫. উভয় হাত কব্জিসহ পৃথক পৃথক ভাবে ধুয়ে নেওয়া।
 ৬. সর্ব প্রথম মাথায় পানি ঢালবে।
 ৭. তারপর ডান কাঁধে পানি ঢালবে।
 ৮.তারপর বাম কাঁধে পানি ঢালবে।
 ৯. তারপর বাকি সমস্ত শরীর ভিজানো।
 ১০. সমস্ত শরীর এমনভাবে পানি পৌঁছানো যেন একটা পশমের গোড়াও পানি বিহীন শুকনা বাকি না থাকে।
 ১১. গোসলের আগে সুন্নত তরিকায় ওজু করা।
 ১২. হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ঘসে-মেজে ধৌত করা।

মুনাজাতের সুন্নাত সমূহ

 ১. মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহ পাকের হাম্দ (প্রশংসা) ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দূরুদ শরীফ পাঠ করবে।
 ২. দু’ হাতের তালু চেহারার সম্মুখে আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখবে।
 ৩. দু’ হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁকা রাখবে।
 ৪. উভয় হাত সিনা বরাবর উঠাবে।
 ৫. হাতের আঙ্গুল সমূহ সামান্য ফাঁকা রাখবে।
 ৬. নিঃশ্বব্দে দুআ করা। তবে দু‘আ সম্মিলিত ভাবে হলে এবং কারো নামাজের বিঘœ সৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলে সশব্দে দুআ করাও জায়িয আছে।
 ৭.নিজেকে ছোট মনে করে খুব কাকুতি মিনতি করে খুব একাগ্রতার সাথে মুনাজাত করবে।
 ৮. মুনাজাত শেষ হলে দু’হাত চেহারায় মুছে ফেলবে।
 ৯. আল্লাহ তাআলার হাম্দ (প্রশংসা) ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দূরুদ পাঠ করে আমিন বলে মুনাজাত শেষ করবে।
 ১০. যে বিষয়টি আল্লাহর নিকট চাইবে তা দৃঢ়তা ও বিশ্বস্ততার সাথে বার বার চাইবে।
 ১১. ওজুর সাথে কেবলা মুখী হয়ে মুনাজাত করবে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান